ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা, ধরে নিয়ে গর্ভপাত!
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে জোর করে গর্ভপাত করা হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় ছাত্রীকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওই ছাত্রীর অভিযোগ, তার দূরসম্পর্কের নানা স্থানীয় প্রভাবশালী শামসুল ইসলাম ওরফে কসাই শামসুল পাঁচ মাস আগে তাকে ধর্ষণ করেন। ওই নানা তাকে ধরে নিয়ে একটি ক্লিনিকে গর্ভপাত করান।
এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে গাংনীতে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরা ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ওই ছাত্রী এনটিভি অনলাইনকে জানায়, শামসুল কসাই তার দূর সম্পর্কের নানা। তাঁর (শামসুল) মেয়ে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ওই মেয়ের সঙ্গে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য পাঁচ মাস আগে শামসুল তাকে অনুরোধ করে। শামসুলের অনুরোধে পাঁচ মাসে আগে কোনো একদিন মেয়েটিকে আনতে যায়। কিন্তু সেদিন ওই মেয়ে ও তার মা বাড়িতে ছিলেন না। এ সুযোগে ঘরে তাকে ধর্ষণ করেন শামসুল। পরে সে চেতনা হারিয়ে ফেললে পানি ঢেলে শামসুল তাকে সুস্থ করেন।
স্কুলছাত্রী আরো জানায়, ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ না করতে শামসুল তাকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেন। এমনকি বিষয়টি পরিবারকে জানালে তাকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেন তিনি। সে আরো জানায়, ধর্ষণের ঘটনার কয়েক মাস পর সম্প্রতি তার শরীরের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখে পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানতে পারে। পরে সে মা-বাবার কাছে বিষয়টি খুলে বলে।
স্কুলছাত্রীর মা এনটিভি অনলাইনকে জানান, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গর্ভপাত ঘটাতে উঠেপড়ে লাগেন শামসুল। তিনি জোর করে তাঁর মেয়েকে গাংনীর একটি ক্লিনিকে নিয়ে গর্ভপাত ঘটান। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাঁর মেয়ের শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। রাতে তাকে (স্কুলছাত্রী) গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আজ সকালে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা আউলিয়ার হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মেয়েটি আজ সকাল ৯টায় এসে ভর্তি হয়। তার পাঁচ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। সেটা অসাধু উপায় অবলম্বন করে যেকোনো ক্লিনিকে অ্যাবরসন (গর্ভপাত) করা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা হাসপাতালে আসে। চিকিৎসা দেওয়ার ফলে মেয়েটি এখন কিছুটা সুস্থ।’
স্কুলছাত্রীর মা জানান, গতকাল বিকেলে তাঁর মেয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে সন্ধ্যার আগে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়েও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে রাতে শামসুলের বিচারের জন্য সালিস ডাকে। কিন্তু এর আগেই শামসুল আত্মগোপন করে হুমকি দিতে থাকেন।
ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়, সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে। কিন্তু এরপরও তারা সুবিচারের জন্য মামলা করতে সাহস পাচ্ছে না। কারো কাছে মুখ খুললে গোটা পরিবারের লোকজনকেই হত্যার হুমকি দিয়েছেন প্রভাবশালী শামসুল।
এদিকে গতকাল বিকেলে ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার চিকিৎসা ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম, মেহেরপুর জেলা শাখার সহসভাপতি নূরজাহান বেগম। ওই সময় শামসুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ছাত্রীর সুচিকিৎসার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
ওই ছাত্রীর গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শামসুল এর আগেও নারীদের উত্ত্যক্ত করেছেন। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁর বিষয়ে মুখ খুলতে কেউ সাহস পায় না।
এ বিষয়ে শামসুলের সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ থানায় মৌখিক কিংবা লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।