‘ফণী’ মোকাবিলায় প্রস্তুত সাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে সাতক্ষীরায় বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীব্র তাবদাহের মধ্যে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। মাঝেমধ্যে আবহাওয়ায় গুমট ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আইলা ও সিডরের স্মৃতি তাদের তাড়িয়ে ফিরছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য আঘাত মোকাবিলায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই মধ্যে এই দুর্যোগের সম্ভাব্য আঘাত হানার বিষয়ে জনগণকে আগাম সতর্ক করা হয়েছে। জেলার তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। অপর চারটি উপজেলায়ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসব উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) বারবার সভা করে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তারা উপকূলীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা রক্ষায় মাইকিং করছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবর রহমান জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। এর আগে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রীর সঙ্গেও ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় হয়।
জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় বলা হয়, জেলার ১৩৭টি সরকারি সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ ও কমিউনিটি সেন্টার দুর্যোগ কবলিত জনগণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আশাশুনি ও শ্যামনগরে তিন হাজার ৬৫৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন। এসব উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সতর্ক সংকেত হিসেবে লাল পতাকা উত্তোলন করে মাইকিং করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রক্ষায় সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ৮৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। তাদের হাতে পর্যাপ্ত ওষুধ ও খাবার স্যালাইন মজুদ রাখা হয়েছে। জলযান ও স্থলযান, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও সুপেয় পানির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা এবং উদ্ধার কাজ পরিচালনায় ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, রেড ক্রিসেন্ট, স্কুল-কলেজের স্কাউট টিম এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও পুলিশ সদস্যদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধি ও তাদের সহযোগী কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী মা, রোগগ্রস্ত মানুষ এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের উদ্ধারে অতি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, জনগণের জানমালের পাশাপাশি গবাদি পশুর জীবন রক্ষায় উঁচু জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিকটেই যাতে পশু খাদ্য মেলে সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সতর্কতা প্রচারের জন্য পাড়ায়-পাড়ায় মসজিদের মাইক ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা সদর এবং সব উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।