হোটেলে নিয়ে স্কুলছাত্রীকে ওষুধ খাইয়ে গণধর্ষণ, পরে হত্যা
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/05/06/photo-1557147602.jpg)
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার একটি আবাসিক হোটেল থেকে ইন্নি আক্তার নামের এক স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে শিবচর পৌরসভার ৭১ উৎসব চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি হাউজে ওই ঘটনা ঘটে।
নিহত ইন্নি শিবচরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা মুন্সীকান্দি গ্রামের মৃত ইলিয়াস মুন্সী। মা শিবচর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের কর্মচারী। মায়ের সঙ্গে ইন্নি শিবচর পৌরসভার স্বাস্থ্য কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে চাইনিজ খাওয়ার কথা বলে ইন্নিকে ৭১ উৎসব হোটেলে নিয়ে যান শিবচরের কাঁঠালবাড়ীর রুবেল খান। এ সময় তিনি খাবারের সঙ্গে যৌন উত্তেজক ওষুধ মিশিয়ে দেন। পরে ইন্নিকে হোটেলের তিনতলার একটি কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন রুবেল। সে সময় ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হোটেলে রেখেই পালিয়ে যান রুবেল।
মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভার ৭১ উৎসব চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি হাউজের কক্ষ থেকে স্কুলছাত্রী ইন্নি আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। ছবি : এনটিভি
এদিকে ওই সুযোগে অসুস্থ ইন্নিকে ধর্ষণ করেন হোটেলের ব্যবস্থাপক রোনাল্ড ও হোটেল বয় খাইরুল। পরবর্তীতে স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেলে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে ইন্নির লাশ উদ্ধার করে।
নিহত ছাত্রীর মামা বলেন, ‘আমার ভাগনিকে ফুসলিয়ে নিয়ে তিনজন গণধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে। একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি এর বিচার চাই।’
৭১ উৎসব চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি হাউজের মালিক ১৬ জন। এঁদের বেশির ভাগই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন শিবচর পৌরসভার মেয়র, শিবচর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আওলাদ হোসেন খান।
এই ঘটনায় মাদারীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আজ সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার জানান, রোববার স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ৭১ উৎসব হোটেলের কক্ষ ভাড়া নেন রুবেল খান। এ সময় স্কুলছাত্রীর সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হন তিনি। একপর্যায়ে রক্তাক্ত অবস্থায় স্কুলছাত্রীকে ফেলে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ হোটেল কক্ষ থেকে যৌন উত্তেজক ওষুধ, কনডম ও স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবন করিয়ে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
মাদারীপুরের শিবচরে ৭১ উৎসব চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি হাউজে স্কুলছাত্রী ইন্নি আক্তারকে গণধর্ষক ও হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হোটেল কর্মচারী রোনাল্ড (বাঁয়ে) ও খাইরুল। ছবি : এনটিভি
জিজ্ঞাসাবাদে আটক হোটেল কর্মচারী রোনাল্ড ও খাইরুল জানান, এই হোটেলে দীর্ঘ দিন থেকেই দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ চলতো। হোটেলের মালিক শিবচর পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন খান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
আটক রুবেল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, কয়েক মাস আগে ইন্নির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় রুবেলের। এই সম্পর্কের ভিত্তিতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলের কক্ষ ভাড়া নেন তিনি। পরে ইন্নির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এ সময় ইন্নি রক্তাক্ত হয়ে অসুস্থ হলে তাকে ফেলে পালিয়ে যান।
নিহতের স্বজনদের দাবি, এরপরে হোটেলের কর্মচারীরা ইন্নিকে একাধিকবার ধর্ষণ করে হত্যা করে।
নিহত স্কুলছাত্রীর মা ডলি বেগম বলেন, আমার মেয়েকে হোটেলে খাওয়ার কথা বলে ফুসলিয়ে নিয়ে তিনজন গণধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে। একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি এর বিচার চাই।