১৫ বস্তা সরকারি ওষুধ জব্দ, দুটি তদন্ত কমিটি গঠন

সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ভেতরে পুঁতে রাখা অন্তত ১৫ বস্তা ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী জব্দ করে পুলিশ। সেই ওষুধ চুরির অভিযোগ তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের ভেতরে দুই কমিটিকেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মাটির নিচে পুঁতে রাখা ওই ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে সাতক্ষীরাজুড়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। সাধারণ মানুষের দাবি, অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার করে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনতে। হাসপাতালের ভেতরে এই ঘটনা ঘটলেও ঘটনার সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়িত নয় বলে দাবি তাদের।
শনিবার ভোররাতের বৃষ্টির পর পুঁতে রাখা এসব ওষুধ মাটির ওপরে উঠে আসে। ঘটনাটি ঘটে হাসপাতাল ক্যান্টিনের পেছনে সেপটিক ট্যাংকের পেছনে। ঘটনা নজরে আসার পর হাসপাতালটির স্টোরকিপার দুপুরে কিছু শ্রমিককে ডাকেন। ওষুধগুলো পুনরায় মাটিতে পুঁতে দিতে শ্রমিকদের পাঁচ হাজার টাকা দিতে চান। কিন্তু শ্রমিকরা ১০ হাজার টাকা দাবি করেন।
এই নিয়ে দরকষাকষির এক পর্যায়ে হাসপাতালের লোকজন ঘটনা জেনে যায়। এরপর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তখন পুলিশ এসে কিছু স্যাম্পল উদ্ধার করলেও পুরো ওষুধ সেখানেই পড়ে থাকে। তবে ঘটনাস্থলটি ঘিরে রেখেছেন কয়েকজন আনসার সদস্য।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, তিনি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বদিউজ্জানকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষের প্রতিনিধি এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবাশীষ চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক জানান, আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহজাহান আলী জানান, তাঁর নির্দেশে একই বিষয়ের ওপর তিন সদস্যের আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইউরোলজি বিভাগের ডা. রুহুল কুদ্দুসকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ডা. প্রবীর কুমার বিশ্বাস ও ডা. আক্তারুজ্জামান।
এই কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানান ডা. শাহজাহান আলী।
হাসপাতাল চত্বরে মাটিতে পুঁতে রাখা ওষুধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহজাহান আলী বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া কোনো ওষুধের গায়ে সরকারি সিল নেই। এতে লাল সবুজ চিহ্নও নেই। এ ওষুধ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোরের নয়। আমরা যে গজ ব্যান্ডেজ ব্যবহার করি তা থান কাপড়ের তৈরি। অথচ যা পাওয়া গেছে তা কাগজের। তা ছাড়া স্টোরে থাকা কোনো ওষুধ খোয়া যায়নি বলেও আমি স্টোর কিপার আহসান হাবিব ও স্টোর অফিসার বিভাস চন্দ্রের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়েছি।’
ডা. শাহজাহান আলী বলেন, ‘ওষুধ ক্রয় বা গ্রহণের পর তা সার্ভে কমিটি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করানো হয়। সেসব তালিকা অনুসরণ করলে পরিষ্কার হবে যে এ ওষুধ সরকারি নয়। এমনকি তাঁর স্টোর থেকে তা খোয়া যায়নি। ঘটনা যে বা যারাই ঘটাক তা ঘটেছে আমার সাতক্ষীরায় যোগদানের আগে। আমি এখানে যোগ দান করেছি ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর।’
এ প্রসঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওষুধ চুরির ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তা প্রত্যক্ষ করার পর সেসব ওষুধ পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসা হবে।’
গতকাল মোস্তাফিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনোভাবেই সহযোগিতা করেনি। তাদের ডাকলেও তারা আসেনি।’