‘এনজিওর ঋণে কেনা ভ্যানের ৩০ কিস্তি এখনো বাকি’

দুর্বৃত্তদের কোপে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাদ্রাসাছাত্র ও কিশোর ভ্যানচালক শাহিনের বাবা হায়দার আলী মোড়ল জানিয়েছেন, বেসরকারি সংস্থা ‘আশা’ থেকে ঋণ নিয়ে ৪০ হাজার টাকায় একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনেছিলেন তিনি। ৪৫ কিস্তিতে শোধ দেওয়ার কথা। এর ১৫ কিস্তি দিয়েছেন। এখনও বাকি ৩০ কিস্তির টাকা। তিনি নিজেও ভ্যান চালান।
আজ সোমবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক মাদ্রাসাছাত্র কিশোর শাহিনের বাবা হায়দার আলী মোড়ল।
দুই মেয়ে ও একমাত্র ছেলে শাহিনের বাবা বলেন, আমার সোনার ছেলেকে যে এভাবে হত্যার চেষ্টা করা হবে তা আমি ধারণাও করতে পারিনি। আমার তো কোনো শত্রু নেই। কারো সঙ্গে কোনো বিরোধও নেই।
হতভাগা এই বাবা জানান, ছেলেটি গোলাঘাটা মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছুটির দিন পেলেই ভ্যানটি নিয়ে ভাড়ায় যায়। ক্লাস শেষে বিকেলেও যেত। আয় করা টাকা এনে দেয় আমার হাতে, না হয় ওর মার হাতে। একইভাবে শুক্রবার সে আমাকে বলেছিল, আব্বা ৩৫০ টাকার একটি বড় ভাড়া পাইছি, তাই যাচ্ছি।
হায়দার বলেন, আমার নিষেধ শোনেনি সে।
হায়দার বলেন, দাদি জোবেদা খাতুনের কাছে দুটি কাঁচামরিচ চেয়ে নিয়ে সেই মরিচ আর তেল নুন দিয়ে মাখা ভাত খেয়ে সকালে ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছিল শাহিন। আমার মনে কু ডেকেছিল। যেতে মানা করলেও শুনল না। এর মাত্র ঘণ্টা দুই পর খবর এলো আমার সোনার ছেলেকে কারা যেনো কুপিয়েছে।
সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সে তার দাদি জোবেদা খাতুনকে বললো, দাদি দুটো কাঁচাঝাল দে। ভাত খাবো। দাদি ঝাল দিলে তেল নুন আর ঝাল পেঁয়াজ মেখে ভাত খেয়ে সে ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে গেল।
ঘণ্টা দুই পর বাদুড়িয়ার একজন লোক আমাকে ফোন করে বলল, তোমার ছেলেকে কারা যেনো কুপিয়ে ফেলে রেখে গেছে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার হামজামতলায়। রাস্তার দুই ধারে পাটক্ষেত। ওই পাটক্ষেতে নিয়ে তার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে পাটকেলঘাটা থানা পুলিশ ও গ্রামবাসী তাকে প্রথমে সাতক্ষীরায়, পরে খুলনায় নিয়ে যায়। আমি রাতে খুলনায় গিয়ে আমার ছেলেকে দেখতে পাই অচেতন অবস্থায়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়। চেতনা থাকা অবস্থায় শাহিন বলেছে, ‘যারা আমাকে কুপিয়েছে তাদের আমি দেখলে চিনি। তাদের বাড়িও চিনি। কিন্তু নাম জানি না।’
বাবা হায়দার আলী তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মঙ্গলকোট এলাকার মিজানুর রহমান, মজনুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান ও ইসমাইল হোসেনসহ অন্যরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তাঁর বাবা। তিনি বলেন, আমি এই হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পাটকেলঘাটা থানায় মামলা করেছি অজ্ঞাত চার আসামির বিরুদ্ধে। তবে তারা কেউই এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানালেন হায়দার আলী।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ তার হাতে ৫০ হাজার তুলে দেন। তিনি বলেন, দেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত শাহিনের খবর দেখে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইতালি প্রবাসী এই টাকা পাঠিয়েছেন।