এবার মিন্নির বাবার সংবাদ সম্মেলন
বরগুনায় প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর এবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ‘দুলাল শরীফ (রিফাত শরীফের বাবা) প্রভাবশালী মহলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার মেয়ের গ্রেপ্তারের জন্য দাবি তুলেছিলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে মিন্নি এক নম্বর সাক্ষী থেকে আসামি হয়েছে।’
আজ বুধবার দুপুর ১২টায় বরগুনা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মূলত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘দুলাল শরীফ প্রভাবশালী মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এরই মধ্যে আমার মেয়ের গ্রেপ্তারের জন্য দাবি তুলেছিলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে মিন্নি এক নম্বর সাক্ষী থেকে আসামি হয়েছে। রিফাত শরীফের হত্যাকাণ্ড আড়াল করতে মিন্নিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর আরো বলেন, ‘২৬ জুন প্রকাশ্যে আমার জামাতা শাহনেওয়াজ রিফাতকে (রিফাত শরীফ) কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই সময় শত শত মানুষের মধ্যে কেউ এগিয়ে না এলেও আমার মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রের মুখে দাঁড়িয়ে স্বামী রিফাতকে একা বাঁচানোর চেষ্টা করে। এ ঘটনায় যে ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়, তার মাধ্যমে মিন্নি দেশবাসীর কাছে সাহসী নারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।’
‘এরপর দুলাল শরীফ বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার ১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে মিন্নিকে রাখা হয়। প্রভাবশালী মহলের চাপে ১৩ জুলাই মিন্নির গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দুলাল শরীফ। এরপর মানববন্ধন করে মিন্নির গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়,’ যোগ করেন মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।
মিন্নির বাবা আরো বলেন, ‘১৬ জুলাই মিন্নিকে আসামি শনাক্ত করার কথা বলে বরগুনার পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর রিমান্ডে নিয়ে তাঁর ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়।’
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আমার মেয়ে অসুস্থ। কিছুদিন আগেও ঢাকায় নিয়ে তাঁকে চিকিৎসা করানো হয়েছে। পুলিশি নির্যাতনে আমার মেয়ে এখন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। তাঁর চিকিৎসার বিশেষ প্রয়োজন। পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী মহলকে আড়াল করতে মিন্নিকে ফাঁসাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে মিন্নির মা জিনাত জাহান মনি, ছোট বোন মেঘলা, ভাই কাফি, নানা মাহতাব হোসেন মোল্লা, পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাকির সিকদার উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৩ জুলাই রাতে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। এ সময় তিনি দাবি করেন, রিফাত হত্যায় মিন্নি জড়িত। মিন্নিকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তিনি। পরদিন দুপুরে মিন্নিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ‘বরগুনার সর্বস্তরের জনগণ’ ব্যানারে বরগুনা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন হয়। সেখানেও দুলাল শরীফ উপস্থিত ছিলেন।
এর দুদিন পর মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ লাইন্সে ডাকা হয়। দীর্ঘসময় জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয় মিন্নিকে।