প্রক্টর কার্যালয়ের খাবার যায় ছাত্রলীগের স্টলে!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলার সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় প্রক্টরের কার্যালয় থেকে ছাত্রলীগের স্টলে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে প্রক্টরের কার্যালয় থেকে ছাত্রলীগের কর্মীদের খাবারের প্যাকেট সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলার সময় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, প্রক্টরের কার্যালয়ের কর্মকর্তা, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রতিদিন দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর এ খাবার সরবরাহ করা হয় প্রক্টরের কার্যালয় থেকে।
প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষা চলার সময় আগত ভর্তি-ইচ্ছুদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ জেলা বা সমিতির ব্যানারে অর্ধশতাধিক স্টল/বুথ সাজিয়ে বসেন। কিন্তু আজ দুপুরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ছাত্রলীগের স্টলে অবস্থানকারী নেতা-কর্মীদের প্রক্টরের কার্যালয় থেকে খাবার নিতে দেখা যায়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় কেনা খাবার কোনো ছাত্র সংগঠনে সরবরাহের নিয়ম নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আবুল হোসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। শুধু শৃঙ্খলা কাজে যারা যুক্ত তাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ করা হয়। ছাত্রলীগ বা অন্য কাউকে এভাবে খাবার সরবরাহ করার কোনো নিয়ম নেই।’
প্রক্টরের কার্যালয় থেকে আজ ছাত্রলীগের স্টলে খাবার নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার শুরু থেকেই ছাত্রলীগ কর্মীরা স্টলে বসে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভর্তি-ইচ্ছু শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। রাতে হলগুলোতেও ভর্তি-ইচ্ছু শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে তারা। তাই আজ পরীক্ষার শেষ দিনে প্রক্টর কার্যালয়কে এসব কর্মীকে আপ্যায়ন করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম।’
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি তন্ময় ধর বলেন, ‘বিভিন্ন সময় উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা নাই বলে শোনা যায়। অথচ আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় একটি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আপ্যায়ন করা হয়েছে। আবার এটা প্রকাশ্যে স্বীকারও করেছে তারা। নিঃসন্দেহে এটা একটা অনৈতিক কাজ।’
তন্ময় ধর প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় সহায়তা করায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের যদি আপ্যায়ন করা হয় সেক্ষেত্রে আরো যেসব বুথ বা স্টল রয়েছে সেসব স্টলের কর্মীদের আপ্যায়ন করা হয়নি কেন? আর শুধু ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরাই নয়, গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই তো হলগুলোতে নিজ নিজ সিটে ভর্তি-ইচ্ছু শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।’
অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো সংগঠনকে খাওয়াই না। যারা আমাদের কাজে সহায়তা করে তাদের অতিথি হিসেবে খাওয়ানো হয়।’