‘খুব নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি’
সারাজীবন সাহসের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। স্বাধীনভাবে লেখালেখি করেছেন। তাঁর সেসব লেখার বিরুদ্ধ মতও উঠে এসেছে। কিন্তু কখনো তাঁর ওপর শারীরিক হামলা হবে এমন আশঙ্কা করেননি তিনি। অথচ এখন সেই আশঙ্কাতেই দিন কাটছে তাঁর। বলছি সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের কথা। দুর্বৃত্তদের হাতে ছেলে হত্যার চার দিনের মাথায় জীবনে প্রথমবারের মতো এমন অসহায় বোধ করছেন বলে জানালেন তিনি।
urgentPhoto
আজ বুধবার সকালে রাজধানীতে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এই অধ্যাপক।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘আমি সারাজীবনই অনেক কাজ করেছি দুঃসাহসের সঙ্গে। কখনো নিরাপত্তার অভাব বোধ করিনি। ১৯৭২ সাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে মোটামুটি আমি স্বাধীনভাবে চলেছি, মত প্রকাশ করেছি। আমার লেখার বিরুদ্ধে অনেকে লিখেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু আমি কোনো সশস্ত্র আক্রমণ ধারণা করিনি। কিন্তু আজকে সকাল থেকে আমি খুব নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।’
গত ৩১ অক্টোবর রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে খুন হন প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন। এর আগ পর্যন্ত নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে না ভাবলেও এখন শারীরিক হামলার শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন দীপনের বাবা।
মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, ‘শুধু পুলিশ দিয়ে সমাজের নিরাপত্তা বিধান করা যাবে না। একই সাথে অপরাধীদের ধরে কেবল শাস্তি নয়, এর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে যদি ভালোর সূচনা চাই, তাহলে হোমটা (ঘর) খোঁজ করতে হবে। রাজনীতির হোম হলো পলিটিক্যাল পার্টি। আজকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-বাম দল এগুলো হলো হোম। যেখান থেকে শুভ চিন্তার, শুভ রাজনীতির সূচনা হওয়া উচিত। কিন্তু এইগুলোর ভেতরে আমরা সেই লক্ষণ দেখছি না। নিরাপত্তার জন্য পুলিশের শেল্টার ... অবশ্যই সেটা আমাদের একটা অবলম্বন, আমি প্রথমেই বলেছি যে পুলিশের প্রতি আমি কোনো রকমের অনাস্থা প্রকাশ করি না। আমি অনুভব করি আমরা যেমন কখনো কখনো অসহায় বোধ করি, পুলিশ অফিসাররাও কখনো কখনো অসহায় বোধ করেন।’
দোষারোপের সংস্কৃতি ছেড়ে সবার মাঝে শুভবুদ্ধির উদয় হলেই- এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে মনে করেন সন্তান হারোনো এই বাবা।