সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরি ভাঙচুর : প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির পুরাতন ভবনের লাইব্রেরি ভাঙচুর ও লণ্ডভণ্ড করার অভিযোগ এনেছে জেলা আইনজীবী সমিতি। রাতের আঁধারে সংঘটিত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের চিহ্ণিত করে অবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছে সমিতি।
আজ বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আলম।
লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট শাহ আলম বলেন, ‘গত ২২ আগস্ট রাতে বার লাইব্রেরির দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। এই ভবনের দখল নিয়ে পুলিশের সঙ্গে মামলা চলছে। ঘটনার রাতে কাছেই পুলিশ পাহারায় ছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৪৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে দখলে থাকা এই লাইব্রেরি ভবন সংক্রান্ত একটি মামলায় গত ৮ আগস্ট আইনজীবী সমিতির অনকূলে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা ছাড়া হাইকোর্টে রিট পিটিশনের পর এই লাইব্রেরিতে বিবাদী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী পরিচালকসহ নয়টি প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তা সত্ত্বেও ভবনটি দখলের জন্য রাতে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। এ সময় আলমারি, শোকেজ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর ছাড়াও মূল্যবান বইপত্র, বাংলাদেশের সংবিধান ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থসহ সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের ডিসিশন সংবলিত অনেক বইপত্র লণ্ডভণ্ড করা হয়েছে।’
সমিতি এ বিষয়ে থানায় একটি এজাহার দিলেও তা এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়নি বলে জানান আইনজীবীরা।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার আইনজীবীরা তাঁদের দাবি আদায়ে মানববন্ধনেরও ডাক দিয়েছেন। এর আগে গত ২৬ আগস্ট তারা আদালতে কলম বিরতি দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
সাতক্ষীরার পুরাতন বারভবন লাইব্রেরি নিয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত উল্লেখ করে পুলিশের প্রতি ইঙ্গিত করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০১৮ সালেও এমন একটি ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।’
এই বারের সম্পত্তি ও ভবন সাতক্ষীরার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক উল্লেখ করে আইনজীবী সভাপতি বলেন, ‘সাতক্ষীরার এই বার ভবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী , মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও মাস্টারদা সূর্য সেনসহ বহু মণীষীর স্মৃতিচিহ্ণ।’
এই বার লাইব্রেরি ভবনকে অন্য কারো হাতে যেতে দেওয়া হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘এই বার সমিতির ভবন সাতক্ষীরার পাঁচশ আইনজীবীর ‘সেকেন্ড হোম’নয় শুধু, এটি জনগণের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত করার অর্থ আইনের শাসন, ঐতিহ্য, জনগণ ও আইনজীবীদের অস্তিত্বের ওপর আঘাত। এমন দুর্লভ বার বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি রয়েছে মাত্র।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, সিএস, এসএ রেকর্ড , সিএস খতিয়ান ও ম্যাপে এই বার লাইব্রেরির উল্লেখ রয়েছে। অথচ তা ডাকাতির ঘটনার মতো তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ কে এম শহীদউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তোজাম্মেল হোসেন তোজাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওসমান গনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইউনুস আলী, অ্যাডভোকেট আকবর আলী, অ্যাডভোকেট আবদুস সেলিম ও অ্যাডভোকেট খায়রুল বদিউজ্জামানসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।