চোখের সামনে কুপিয়ে হত্যা, তবু গ্রেপ্তার নেই!

'রাতের খাওয়া শেষে বাড়ির উঠোনে চেয়ারে বসে আমার বাপসোনা সবার সঙ্গে কথা বলছিল। এ সময় আমাদের চোখের সামনেই তাকে ধারালো গাছি দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করে বীরদর্পে চলে গেল খুনিরা। বাধা দিয়ে বলেছিলাম, ‘আর মারিসনে, ওকে ছেড়ে দে, ওর বদলে আমাদের পরান নে, কিন্তু শোনেনি।’
এমন আকুতি জানিয়ে মা হামিদা খাতুন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘একমাস পার হলেও আমার ছেলে আলফাজ হত্যার আসামিরা ধরা পড়েনি। উল্টো তারা আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমি এখন নাতি-নাতনি ও ছেলেবউ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।’
বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাবাড়িয়া গ্রামে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত ট্রলিচালক আলফাজ গাজীর মা হামিদা খাতুন।
আলফাজ গাজীর মা আরো বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমার ছেলেকে ওরা মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছিল। এমনকি ২৩ জুন একদল খুনিকে বদরুর মাধ্যমে তারা ভাড়াও করেছিল। অবস্থা আঁচ করতে পেরে আলফাজ স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামের পা জড়িয়ে ধরে তাকে বাঁচানোর জন্য বলেছিল। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। এর পর ৩০ জুলাই রাতে বাড়ির লোকজনের সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় সোলেমান গাজী, ওসমান গনি, ইসমাইল গাজী, নাজমুল গাজী, রহিম মোল্লা, খালেদা খাতুন ও বদরু হত্যাকারীদের সঙ্গে ছিলেন। ধারালো দা দিয়ে কোপানোর সময় ছেলে আলফাজ দৌঁড়ে আমার কোলে আশ্রয় নিয়েও রক্ষা পায়নি। এমনকি তাঁর স্ত্রী শারমিন, বোন আইনুর, ভাবি মর্জিনাসহ সবাই খুনিদের পা জড়িয়ে ধরে আলফাজের প্রাণভিক্ষা চেয়েও ব্যর্থ হয়।’
শোকার্ত আলফাজের মা বলেন, ‘তাকে হত্যা করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় কলারোয়া থানায় একটি জিডি করেছিল আলফাজ। এক সপ্তাহেও পুলিশ সেই জিডি রেকর্ড করেনি। কিছুদিন পর জিডি রেকর্ড হয়েছে জানালেও তার কপিও পুলিশ আমাদের কাছে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এখন আমি আমার পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। এই হত্যার ঘটনায় পুলিশ মল্লিকা বেগম, নিলুফা খাতুন ও বিউটিকে গ্রেপ্তার করলেও প্রধান আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।’
খুনিদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়ে হামিদা খাতুন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন নিহত আলফাজের চাচা ইনসান আলী গাজী, আলফাজের স্ত্রী শারমিন বেগম ও তাঁর শিশুকন্যা শিরিনা, ইনতাজ গাজী, ভাই আলতাফ হোসেন, কামরুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, বোন আইনুর বেগম ও মর্জিনা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যরা।
লিখিত বক্তব্যে সবশেষে হামিদা খাতুন বলেন, ‘এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আলফাজের কাকা আশরাফকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে সোলেমান, ইসমাইল, ওসমান গনি, নাজমুল ও রহিমসহ কয়েকজন। এ সংক্রান্ত মামলাটি স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম মীমাংসার নাম করে পুলিশকে ম্যানেজ করে মোটা টাকা হাতিয়ে নেন। এ হত্যাচেষ্টার বিচার তো হয়ইনি বরং এর পর থেকে তাঁরা আরো বেপরোয়া হয়ে আলফাজকে হত্যা করে।’