সাতক্ষীরায় নির্মাণশ্রমিকের রহস্যজনক মৃত্যু, হত্যার অভিযোগ

অস্বাভাবিক মৃত্যু জেনেও একজন নির্মাণ শ্রমিকের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। আর এজন্য একটি চক্র মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকদের দাবি, নির্মাণশ্রমিক আরিফকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত আরিফ হোসেন (৩০) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শহরতলির রসুলপুরে শিশু হাসপাতালের সামনে একটি পাঁচতলা ভবনের নির্মাণকাজ করছিলেন আরিফ। এ সময় তিনি তিনতলা থেকে পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান আরিফ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ণ ছিল। কিছু সময় পর রহস্যজনক কারণে ময়নাতদন্ত না করেই আরিফের লাশ ফেরত আনা হয়। পরে পুলিশের অনুমতি নিয়ে তাঁকে পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়।
এদিকে নিহত আরিফের ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমার ভাইকে কেউ হত্যা করেনি। এজন্য ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি নিয়েছিলাম।’
তবে প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকদের দাবি, ঘটনার দিন সকালে নির্মাণকাজ চলাকালে আরিফের সঙ্গে তাঁর গ্রুপের সহযোগী শ্রমিক তোরাব আলী ও অন্যদের ঝগড়া ও মারামারি হয়। কিছু সময় পর তা মিটে গেলে আরিফ ফের কাজ করতে থাকেন। এ সময় পেছন দিক থেকে কে বা কারা তাঁর মাথায় সজোরে ভারি বস্তু দিয়ে আঘাত করলে গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারান আরিফ। অবস্থা খারাপ দেখে তাঁকে নিচতলার একটি কক্ষে ফেলে রেখে চলে যায় অন্য শ্রমিকরা।
কেয়ারটেকার এ ঘটনা বাড়ির মালিক রাসেল আরমানকে জানালেও তিনি পাত্তা দেননি। এমনকি বিষয়টি নির্মাণ ঠিকাদার মিজানকে জানানোর পর থেকে তিনি তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখেন। স্থানীয় একজন দোকানি তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
এ বিষয়ে বাড়ির মালিক রাসেল আরমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
নির্মাণ ঠিকাদার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আরিফের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। পড়ে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। কাজ করার সময় বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে তিনি নিচে পড়ে যান।’
স্থানীয় লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মনিরুল ইসলাম একই কথা জানিয়ে বলেন, ‘আরিফের পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁকে দাফন করা হয়েছে।’
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম ও কাটিয়া পুলিশ কাম্পের ইনচার্জ তাসলিম হোসেন জানান, লাশ হাসপাতালে নেওয়া হলেও নিহত আরিফের পরিবারের লোকজন তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের নামে কাটাছেঁড়া করতে নিষেধ করেন। এজন্য অভিযোগ না থাকায় তাঁকে দাফন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, একটি চক্র এ ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা প্রচার করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে। এরই মধ্যে নির্মাণাধীন ভবনটির কাজও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে বাড়ির মালিক, কেয়ারটেকার ও কোনো শ্রমিককে সেখানে দেখা যায়নি।
তবে নিহত আরিফের ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বাড়ির মালিক তাঁর পরিবারকে দুই লাখ দিতে চেয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত তা দেননি।
এ ব্যাপারে পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম ও এসআই তাসলিম জানান, টাকা লেনদেনের কোনো বিষয় সম্পর্কে তাঁরা জানেন না।