দুই পত্রিকার দুই সম্পাদকের বিষোদগারে ফেটে পড়ল সাতক্ষীরা আ.লীগ

সাতক্ষীরার দুটি দৈনিক পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল চেয়ে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, কাল থেকে সাতক্ষীরায় দৈনিক পত্রদূত ও দৈনিক কালের চিত্র অস্তিত্ব দেখতে চাই না। এই দুই পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও অধ্যক্ষ আবু আহমেদকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কার করতে হবে। একই সঙ্গে আরো ছয়-সাতজন সাংবাদিক গডফাদারকেও দেখে নেওয়া হবে।
সমাবেশে বলা হয়, খুলনার একটি পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে। এ পত্রিকার সম্পাদক এখন জেলে রয়েছেন।
সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এ কথা উল্লেখ করে জনসভায় আগতদের প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কি সাতক্ষীরার পত্রদূত ও কালের চিত্রর ডিক্লারেশন বাতিল চান? তিনি বলেন, গুটি কয়েক মানুষ সাতক্ষীরার মানুষকে বোকা বানিয়ে জিম্মি করে রেখেছে। তারা গঠনমূলক কিছুই করে না। এসব গডফাদারকে সাতক্ষীরা থেকে নির্মূল করতে হবে।
আজ রোববার সকালে সাতক্ষীরা জেলা শহরের লাবণী সিনেমা মোড়ে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের এই জনসভা। এতে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম শওকত হোসেন।
শহরের চলমান গুড়পুকুরের মেলা ও বৃষ্টির মধ্যে ব্যস্ততম এলাকার সব গাড়ি ও রাস্তার মুখ বন্ধ করে অস্বাভাবিক যানজটের মধ্যে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সাতক্ষীরা থেমে থাকবে না। এখানেও উন্নয়ন হচ্ছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ যাচ্ছে। গুটি কয়েক মানুষের জন্য সব মানুষ খারাপ থাকতে পারে না।
সংসদ সদস্য মোস্তাক দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত ৭০-এর সাবেক গণপরিষদ পরিষদ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দিনকে নিজের সহযোদ্ধা উল্লেখ করে সমালোচনা করে বলেন, তিনি গণবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
সমাবেশে অন্য বক্তারা একই সুরে দৈনিক পত্রদূত ও দৈনিক কালের চিত্রর ডিক্লারেশন বাতিল দাবি করে বলেন, তারা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের বিরুদ্ধে লেখায় তিনি আর মন্ত্রী হতে পারেননি। এবার তাঁরা সাংসদ রবির বিরুদ্ধে লিখে সাধ মিটাতে চাইছে। এ দুটি পত্রিকাকে বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তারা বলেন, ‘এমপি রবি সাতক্ষীরার ২২ লাখ মানুষের অভিভাবক। তাঁর বিরুদ্ধে লেখালেখি কেন?’
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি ও মাথা ফাটাফাটি উল্লেখ করে দুই একজন সাংবাদিককে তারা ভূমিদস্যু হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাদের প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, আবু আহমেদ ও আবুল কালামকে জেলা প্রশাসকের কাছে বসা দেখতে চাই না। ওই দুটি পত্রিকা মিথ্যা ও কুৎসা রটনাকারী জানিয়ে সমাবেশে আরো বলা হয়, সাতক্ষীরার মানুষ যেন পত্রিকা দুটি না পড়েন।
দুই সাংবাদিকের নাম বারবার উচ্চারণ করে বলা হয়, তাদের সঙ্গে যারা থাকবেন তাদের পিটিয়ে সাতক্ষীরা ছাড়া করা হবে।
সমাবেশে বক্তারা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক কালের চিত্র সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহমেদ এবং প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বামঘরানার অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদকে বিএনপির এজেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুনার রশীদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবু, যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, মহিলা লীগের সম্পাদক জোসনা আরা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সায়ীদ, সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মো. শাহজাহান আলি, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোরশেদ, ডা. মনসুর আহমেদ, সাবেক বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদা আক্তার বানু প্রমুখ।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হায়দর আলী তোতার বাড়ি থেকে ৯ জুয়াড়িকে টাকা ও সরঞ্জামসহ আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় হায়দর আলী তোতাকে দল থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত ও দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবরে একজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে বলা হয়, ‘তোতা তাঁর আত্মীয়’। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সাংসদ রবি ও তাঁর অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রোববারের জনসভায় ওই দুটি পত্রিকা ও দুই সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কটু ভাষায় বিষোদগার করা হয়। তবে সমাবেশে জুয়ার আসর পরিচালনাকারী হায়দর আলী তোতা প্রকৃতপক্ষে ওই জনপ্রতিনিধির আত্মীয় কি না, তা নিয়ে কোনো কথাই বলেননি বক্তারা।