গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভৈরবের দুই গ্রাম পুরুষশূন্য

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র সংঘর্ষ ও মামলার কারণে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের দুটি গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে গ্রাম দুটির পুরুষরা পালিয়ে থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রধান পেশা কৃষিকাজ।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম তালুকদার এনটিভি অনলাইনকে জানান, ভৈরবের শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের বদুর বংশের জয়নাল মেম্বার এবং সুলাইমান বংশের ডা. হুমায়ুন গ্রুপের লোকজন গত ১৬, ১৭ ও ১৮ নভেম্বর তিন দফা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আত্মীয়তার সূত্রে পাশের সুলায়মানপুরের আরো কয়েকটি বংশের লোকজন এসে সংঘর্ষে যোগ দিলে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়। ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে ভবানীপুর চকবাজারসহ কয়েকশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৯০ রাউন্ড রাবার বুলেটসহ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ছোড়ে। গ্রেপ্তার করা হয় ১১ জনকে।
এ ছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় ৪০ সদস্যের একটি অস্থায়ী পুলিশক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।
পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ভৈরব থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু তাহের বাদী হয়ে ৫৯ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৬০৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ ছাড়া সংঘর্ষের প্রথমদিন আহত জয়নাল মেম্বার গ্রুপের রায়হান (২৫) নামে এক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ নভেম্বর মারা যান। এই ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে ৬৪ জনের নাম উল্লেখসহ প্রতিপক্ষের ৬৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দুই মামলায় দুই গ্রামের প্রায় ৭০০ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আর এতে আতঙ্কিত হয়ে ভবানীপুর ও সুলায়মানপুর গ্রাম এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কৃষিকাজ।
সরেজমিনে সুলাইমানপুর ও ভবানীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সুনসান নীরবতা। দোকান-পাট-বাজার সব বন্ধ। ভাঙচুর আর মালামাল লুটের আলামত রয়েছে প্রায় প্রতিটি দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
সব সময় ভৈরব-মেন্দিপুর সড়কের পাশের ভবানীপুর চকবাজার লোকসমাগমে কর্মচঞ্চল থাকত। সেই বাজারটিতে এখন যেন কবরের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। গ্রামগুলোর দু-একটি বাড়িতে নারী-শিশুদের উপস্থিতি দেখা গেলেও কোথাও কোনো পুরুষের দেখা পাওয়া যায়নি।