নড়িয়ায় আ.লীগের ২ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/12/26/photo-1451139889.jpg)
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা, পাল্টাহামলা ও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। একে অপরের প্রচারকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আতঙ্কে নড়িয়া বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নড়িয়া পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান মেয়র হায়দার আলীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য শহীদুল ইসলাম বাবু। নির্বাচনের শুরু থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করে আসছেন তাঁরা।
গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হায়দার আলীর সমর্থনে পৌরসভার প্রেমতলা এলাকায় মুন্সিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে উঠান বৈঠক চলছিল। সন্ধ্যায় স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদুল ইসলামের সমর্থকরা ওই বৈঠকে হামলা চালায়। এ সময় ২০-২৫টি ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানাসহ আওয়ামী লীগের ২০ নেতা-কর্মীকে মারধর করা হয়। প্রচার চালানোর সময় মারধরের শিকার হন আওয়ামী লীগের চার নারী কর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নারী কর্মী বলেন, ‘শুক্রবার সকালে নৌকা প্রতীকের প্রচারে বের হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদুল ইসলামের সমর্থকরা গতি রোধ করে। প্রচার না করার হুমকি দেয়। ভয়ে আমরা পালিয়ে বাড়ি চলে আসি।’
এদিকে আজ শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে যাওয়ার সময় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম বেপারীকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়া হয়। এ ঘটনার সূত্র ধরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নড়িয়া বাজারে সংঘর্ষ শুরু হয়। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সংঘর্ষে দুই পক্ষের ৩০ নেতা-কর্মী আহত হয়। এ সময় শতাধিক ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির বেপারীর শরীরে বোমার স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। আতঙ্কে নড়িয়া বাজারের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শরীয়তপুর-নড়িয়া ও নড়িয়া-জাজিরা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
দুপুর ১টার দিকে নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান রাঢ়ীর ছেলে নড়িয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সেকান্দার আলমকে কুপিয়ে আহত করা হয়।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দুজন মেয়র প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আমার বিজয় নিশ্চিত জেনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাঁর কর্মীদের নিয়ে আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমার ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীর ওপর আমার সমর্থকরা হামলা চালায়নি।’
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী হায়দার আলী বলেন, ‘আমাকে প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন। নড়িয়ার কিছু সন্ত্রাসী শেখ হাসিনার প্রতীককে চ্যালেঞ্জ করে দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। হামলা চালিয়ে কর্মীদের দুর্বল করে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমার কর্মীরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।’
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী বলেন, নড়িয়ায় হায়দার আলী ও শহীদুল ইসলামের সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোতে এখনো কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি।