সন্ত্রাস বন্ধ করলেই বিএনপির সাথে আলোচনা : আ.লীগ
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, হরতাল-অবরোধের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করলেই কেবল বিএনপির সাথে আলোচনা সম্ভব।
আজ শনিবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বোমাবাজ আর খুনিদের সাথে কোনো আলোচনা সম্ভব নয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গতকালকে বেগম খালেদা জিয়া প্রেস কনফারেন্স করেছেন এবং সেই প্রেস কনফারেন্সের আংশিক জবাব গতকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জয়েন্ট সেক্রেটারি হানিফ সাহেব ইতিমধ্যেই দিয়েছেন। আসলে বেগম খালেদা জিয়া যে প্রেস কনফারেন্স করলেন, এটা কোনো বস্তুনিষ্ঠ প্রেস কনফারেন্স ছিল না। তিনি সেখানে উল্লেখ করেন নাই যে ইতিমধ্যে ১২০ জন নিরীহ মানুষকে তথাকথিত অবরোধের নামে হত্যা করা হয়েছে। বোমায় নিহত হয়েছে ৬৬ জন, পরিবহন যাত্রী নিহত হয়েছেন ৩৫ জন, পরিবহন শ্রমিক নিহত হয়েছেন ৫৫ জন, ৯ জন নারী নিহত হয়েছেন, শিশু নিহত হয়েছেন সাতজন, দিনমজুর নিহত হয়েছেন ৯ জন, ছাত্র নিহত হয়েছেন পাঁচজন, প্রবাসী দুজন এবং পুলিশ একজন। এই ১৫০ জনের জীবন নেওয়াই হইলো খালেদা জিয়ার এই আন্দোলনের ফলাফল। এই মানুষকে হত্যা করে, নিরীহ শ্রমিকদের হত্যা করে, নারীদের হত্যা করে, শিশুদের হত্যা করে পৃথিবীতে এই ধরনের কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয় নাই। বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যই বাংলাদেশকে পোড়ামাটির দেশে পরিণত করা।’
খালেদা জিয়ার আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, এখনো বলি, বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার আন্দোলন কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়। এটা নির্বাচনের আন্দোলনও নয়। এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আন্দোলনও নয়। এই আন্দোলন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। আজকে পৃথিবীতে যে অপশক্তিকে সারা বিশ্ব একসাথে মোকাবিলা করছে, তারই একটি অংশ ইসলামিক স্টেট। এই আইসিস, এই তালেবান, এই আল কায়েদা এই তাদের পক্ষের শক্তি বেগম খালেদা জিয়া। এই বাংলাদেশটাকে তালেবানি দেশ হিসেবে তিনি পরিণত করতে চান। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সেখানে একটা আইসিসের মতো অপরাষ্ট্র তিনি সৃষ্টি করতে চান।
তিনি যদি শান্তির পক্ষে থাকেন, গণতন্ত্রের পক্ষে থাকতেন, তাহলে এতগুলো মানুষকে তিনি পুড়িয়ে মারতে পারতেন না।’
বিশ্বের কোনো দেশ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে না জানিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘কদিন আগে আপনারা দেখলেন ইরাকে-সিরিয়ায় দুই জাপানি সাংবাদিককে এই আইসিসের সন্ত্রাসীরা অপহরণ করেছে। জাপানিজ গভর্নমেন্ট আইসিসের সঙ্গে, এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো আলোচনা (না) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজকে ইউরোপ বলেন, আমেরিকা বলেন, জাপান বলেন কেউ এই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি নয়। কারণ এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে শান্তি আনা সম্ভব নয়। তাই সমগ্র বিশ্ব আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে যে সন্ত্রাসীর সঙ্গে কোনো আলোচনা করা চলবে না এবং বাংলাদেশেও যেহেতু পৃথিবীর রাষ্ট্রব্যবস্থায় একটি স্বাধীন দেশ। আমরাও সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। যদি সন্ত্রাসীর সঙ্গে আলোচনা করেন তবে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। আশ্রয় দেওয়া হয়।’
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করলেই কেবল আলোচনা করা সম্ভব জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজকে যদি খালেদা জিয়া তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীকে সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করেন, বাংলাদেশে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, মানুষ মারা বন্ধ করেন, শিশু মারা বন্ধ করেন, পুলিশ মারা বন্ধ করেন... তাহলে এই দেশে একটা শান্তির পরিবেশ আসে। সেই শান্তির পরিবেশেই একমাত্র আলোচনা করা সম্ভব।’
‘কিন্তু সন্ত্রাস দিয়ে, বোমা মেরে, মানুষকে হত্যা করে, দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতি করে, সরকারকে জিম্মি করে নির্বাচন চান, সেটা এই বাংলাদেশে কোনো দিন হবে না।’ মন্তব্য করেন সৈয়দ আশরাফ।
খালেদা জিয়ার দেওয়া আলোচনার প্রস্তাব সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘তিনি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিসের আলোচনা? রক্তাক্ত বাংলাদেশ। এখন সময় এই সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে দমন করা এবং বাংলার মাটি থেকে চিরদিনের জন্য এই সন্ত্রাসকারীদের উৎখাত করা।’
‘দেখতে শুনতে মনে হয় নাদুস-নুদুসই’
খালেদা জিয়া সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘গতকালকে দেখলাম উনাকে টেলিভিশনে। মনে হলো না উনি অবরুদ্ধ হিসেবে আছেন। দেখতে শুনতে মনে হয় নাদুস-নুদুসই এবং পত্র-পত্রিকায় উঠে যে, উনি না কি খাবার-টাবার পাচ্ছেন না। তাঁকে দেখে মনে হয় নাই যে তাঁর এক পাউন্ড ওজনও কমছে- এবং সাজগোজেরও কমতি ছিল না। এটা ভালো কথা। উনি সুখে আছেন, শান্তিতে আছেন এবং নিরাপত্তায় আছেন। সেটাই আমরা আশা করি।’
বিএনপির চেয়ারপরসনের গতকালের সংবাদ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এমন মিথ্যাচার গতকালকে তিনি করলেন। লাইন বাই লাইন যদি আমরা যাই, প্রতিউত্তর দিতে অনেক সময় প্রয়োজন। আমি বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করব আপনি এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রত্যাহার করুন। আপনি অবরোধ প্রত্যাহার করুন। বাংলাদেশের মানুষকে স্বাভাবিক জীবন যাত্রার আপনি পরিবেশ তৈরি করুন। পরিবেশ ছাড়া কোনো দিনই, যেটাই আপনি চান, যেভাবেই আপনি চান, সেটা কিন্তু সম্ভব হবে না। সারা বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করে, একটা নির্বাচিত সরকারকে জিম্মি করে আপনি আপনার দাবি আদায় করবেন, সেটা কোনোদিনই সম্ভব হবে না।’
‘আমরা জানি’
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে হত্যা-জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে আহ্বান জানান সৈয়দ আশরাফ। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, আপনার অর্থ কোত্থেকে আসে। আমরা জানি, আপনার শক্তিটা কোথায়। আমরা জানি, কারা এই সন্ত্রাসীদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং কোত্থেকে নির্দেশ আসছে, সেটাও কিন্তু আমরা জানি।’
‘খালেদা জিয়ার কাছে বাংলাদেশের কোনো মানুষ নিরাপদ নয়’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘তিনি চান ক্ষমতা। গত নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করলেন না। কেন? আইনে তো কোনো বাধা ছিল না, সংবিধানে কোনো বাধা ছিল না। তিনি নিজেই নির্বাচনে আসলেন না। তার জন্য সমগ্র জাতিকে তিনি অবরুদ্ধ করেছেন। কিসের জন্য?’
সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘নির্বাচন তো হবেই। সংবিধান হয়ে যখন সময় আসবে, বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আমি আশা করি, বিএনপি অংশ গ্রহণ করবে। আর যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তবে তার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ সেই দায়-দায়িত্ব নেবে না।’