বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা, বৃদ্ধের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মতমুরা ইউনিয়নে বাকপ্রতিবন্ধী এক কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী এক বৃদ্ধের হাতে ধর্ষণের শিকার হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে প্রতিবেশী গোলাম রসুল (৭৫) পলাতক। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ।
মতমুরা ইউনিয়নের স্থানীয় লোকজন জানান, সম্প্রতি বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ের (১৫) শারীরিক পরিবর্তন দেখতে পান বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা। গ্রামের লোকজন মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেন যে তার গর্ভজাত সন্তানের বাবা কে?। এ সময় প্রতিবেশী নানা গোলাম রসুলের কথা ইঙ্গিত করে সে।
ইশারা ভাষায় মেয়েটি জানায়, মাস চারেক আগে গরুর ঘাস নিতে কৌশলে তাকে ডাক দেন গোলাম রসুল। এরপর মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন তিনি। লজ্জায় মেয়েটি বিষয়টি গোপন করে। একপর্যায়ে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
এদিকে গোলাম রসুল মেয়েটির গর্ভপাত ঘটানোর জন্য গ্রাম্য চিকিৎসক আমিরুল ইসলামকে জানালে তিনি চার হাজার টাকা নেন এবং কুষ্টিয়া শহরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। মেয়েটি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে আসে।
বিষয়টি গ্রামের লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় লোকজন সালিস ডাকেন। সালিসে অভিযুক্ত গোলাম রসুল উপস্থিত না হলেও মেয়েটির পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এতে রাজি হয়নি তারা।
মেয়েটির মা জানান, তাঁদের আদি বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে মতমুরা ইউনিয়নের গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে হাসঁ-মুরগি পালন ছাড়াও সিন্দুরের কৌটা, ঝাড়ু তৈরি করে যা পান তা দিয়েই সংসার চালান। এখন মেয়ের সর্বনাশ হওয়ায় কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের লোকজন মেয়েটির বাড়িতে জটলা করছেন। কীভাবে এর সমাধান করা যায় তারও বাঁকা পথ দেখছেন। গ্রামের বাসিন্দা মতমুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আনারুল ইসলাম উঠেপড়ে লেগেছেন কিছু টাকা দিয়ে মেয়েটিকে ম্যানেজ করা যায় কিনা। কিন্তু কয়েকজন যুবক এতে বাধা দেওয়ায় আনারুল পিছু হটেছেন। টাকার প্রলোভন ছাড়াও হুমকি-ধমকিও চলছে পরিবারটির ওপর।
এ ব্যাপারে সালিস বৈঠকের নেতৃত্বদানকারী সাবেক ইউপি সদস্য আনারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
গোলাম রসুলের বাড়ি গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি কোথায় গেছেন তাঁরা জানেন না। ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁরা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এদিকে গোলাম রসুলের মুঠোফোনও বন্ধ থাকায় তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে গাংনী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল আমিন এনটিভি অনলাইনকে জানান, ধর্ষণের পর বাকপ্রতিবন্ধী এক কিশোরীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কাল রোববার মেয়েটির মা এলে তড়িৎগতিতে ব্যবস্থা নেবেন।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন জানান, থানায় লিখিত অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।