১৮৫ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা
গাজীপুরে আদালতের এজলাস ভাংচুরের অভিযোগে ১৮৫ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমীন বাদী হয়ে গত শনিবার মামলাটি করেন। মামলায় ৩৫ জনের নামোল্লেখ করে বাকি ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১১ মার্চ বেলা ১১টার দিকে একদল আইনজীবী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আইনজীবীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রবেশ করে কর্তব্যরত গার্ড কমান্ডার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবু সাঈদ, কনস্টেবল আনোয়ার হোসেনসহ জেলা গোয়েন্দা শাখার সদস্যদের গালাগাল, এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও ইট নিক্ষেপ করে জখম করে।
পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আইনজীবীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে অবস্থিত জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত নম্বর ২, ৩ ও ৪-এর এজলাস ও চেম্বার এবং জেলা জজ আদালতের এজলাস ভাংচুর, নথি তছনছ করাসহ কর্তব্যরত বিচারকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও অবমাননা করে। এ সময় বিচারক নির্মলেন্দু দাসকে হত্যার উদ্দেশ্যে কলমদানি ও পেপারওয়েট নিক্ষেপ করে আহত করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলায় যাঁদের নামোল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন—জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি ড. শহীদুজ্জামান, সাবেক সভাপতি আবদুস সোবহান, সাবেক স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোতাহার হোসেন, মিজানুর রহমান, খালেদ মাহমুদ, হুমায়ুন কবীর, আরিফ, আলেয়া, খালেদা, জেবুন্নেছা, জহিরুল ইসলাম লিখন, নাছির, রফিক, আ. মতিন, বিপ্লব, সেলিমুর রহমান, সেলিম, শেখ রফিক, জহির, সংযুক্ত রানী দুধে, আনোয়ার, আলম, ফখরুল ইসলাম, শরিফ-১, তার্কি, কামরুল ইসলাম শাকিল, মাহমুদুল আলম, ওহিদুজ্জামান মনির, বারিউল সিদ্দিকী, হুমায়ুন ও হাজি আদম আলী। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অনুসারী আইনজীবীরা রয়েছেন।
গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট দেওয়ান মো. ইব্রাহীম এনটিভি অনলাইনকে জানান, ১১ মার্চের ঘটনায় প্রশাসন এবং আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন এখনো শেষ হয়নি।
তার আগেই আইনজীবী সমিতির বর্তমান ও সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক, সাবেক দুই সভাপতিসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের নামে সাজানো মামলা দায়েরের ঘটনায় আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এরই মধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নিন্দা জানানো হয়েছে। মামলাটি আইনিভাবেই মোকাবিলা করা হবে বলে জানান অ্যাডভোকেট দেওয়ান মো. ইব্রাহীম।
সূত্র জানায়, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল ও আলেয়া আক্তারসহ ১৮ জনের নামে জয়দেবপুর থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করে প্রতিপক্ষ। ওই মামলায় ১০ মার্চ রাতে নগরীর ডেকেরচালা এলাকার বাড়ি থেকে পুলিশ আইনজীবী ইব্রাহীম খলিলকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ১১ মার্চ আদালত চত্বর ও জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে আইনজীবীদের একাংশ। একপর্যায়ে আইনজীবীরা নির্মলেন্দু দাসের এজলাস ভাঙচুর করেন।
এ ঘটনার পর ওই দিনই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফজলে এলাহীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোলাইমান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি দেওয়ান মোহাম্মদ ইব্রাহীম।
এ ঘটনার পরদিন ১২ মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গাজীপুর আদালত পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এবং আদালত প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন। পরে তিনি বিচারক ও আইনজীবী সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।