৬৩৯ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট চলছে

দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
প্রথম ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
তবে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের আশ্বস্ত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে, সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নির্বাচনী এলাকায় মাঠে টহলে রয়েছে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসারসহ প্রায় দেড় লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া প্রতি উপজেলায় সঙ্গে রয়েছে চারজন নির্বাহী ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভোটে অনিয়ম হলে ছাড় দেওয়া হবে না। নির্বাচন কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যারাই হোক না কেন, ভোটে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শাহনেওয়াজ বলেন, ‘ব্যর্থতার জন্যও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধ করলে সে যে-ই হোক, তাকে গ্রেপ্তার ও তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি, এটা একটা সতর্কবার্তা সবার জন্য।’
ইসির দেওয়া তথ্যমতে, দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৩১ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
৬৩৯ ইউপিতে মোট ৩০ হাজার ৩৮৩ প্রার্থী রয়েছে। চেয়ারম্যান পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন দুই হাজার ৬২৬ জন। সংরক্ষিত নারী সদস্যপদে ছয় হাজার ৪৯৮ জন, সাধারণ সদস্যপদে ২১ হাজার ২৫৯ জন। এসব ইউপিতে মোট ভোটার এক কোটি ১২ লাখ ১২ হাজার ৩৩৪ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ছয় হাজার ২০৫টি। ভোটকক্ষ ২৩ হাজার ২১টি। আজকের ভোটে মোট এক লাখ দুই হাজার ২৬৮ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার ছয় হাজার ২০৫ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৩২ হাজার ২১ জন ও পোলিং অফিসার ৬৪ হাজার ৪২ জন।
মিছিল-সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোট গ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা, ভোট গ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোট গ্রহণের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ওই নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান করতে এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা সংঘটিত করতে বা তাতে যোগদান করতে পারবে না। এই বিধি লঙ্ঘন করলে অন্যূন ছয় মাস বা অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
ইউপি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে মঙ্গলবার থেকে মাঠে রয়েছে বিভিন্ন বাহিনীর দেড় লাখ সদস্য। একই সঙ্গে ৪৭ জেলার ৬৪৩ ইউপিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি বিচারিক হাকিমরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে রয়েছেন।
নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি
নির্বাচনের কারণে ৬৩৯ ইউপিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে নির্বাচনী এলাকায় সব কার্যালয় বন্ধ থাকবে।
যান চলাচল নিষিদ্ধ
এরই মধ্যে যেসব এলাকায় ভোট হবে, সেসব এলাকায় যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভোটের আগের রাত থেকে ৩২ ঘণ্টা সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে ইসি। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাঁদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও অনুমোদিত সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে তা শিথিল থাকবে।
ইসির নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত দেশি/বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং চিকিৎসা, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কাজে ব্যবহারের জন্য উল্লেখিত যানবাহন চলাচল নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭১২ ইউপিতে ভোট হয়েছে। আজ দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯ ইউপিতে ভোট হচ্ছে। তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল, চতুর্থ ধাপে ৭ মে, পঞ্চম ধাপে ২৮ মে ও ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।