বাঁশঝাড়ে মিলল ইমরান সরকারের ভাইয়ের ঝুলন্ত লাশ
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের চাচাতো ভাই দাতাউর রহমানের (২৬) ঝুলন্ত লাশ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আজ রোববার দুপুরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১০৭২-এর কাছে ব্যাপারীপাড়ার জিঞ্জিরাম নদীপাড়ের বাঁশঝাড় থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। তবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে পুলিশের দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।
লাশের উদ্ধারকারী রৌমারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান ও এসআই আতাউর রহমান জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে দুপুর সোয়া ২টায় লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা দাতাউর রহমানকে হত্যা করে বাঁশঝাড়ের জঙ্গলে লাশ ঝুলিয়ে রাখে।
লাশ থেকে ২০০ গজ দূরে দুই ধরনের দুটি স্যান্ডেল, কয়েকটি পরিত্যক্ত ব্লেড, সিগারেটের প্যাকেট, সিগারেটের অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়। সেখানে মাটিতে ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া গেছে। পড়ে আছে পোড়া মবিলের জেরিকেন। শরীরে পোড়া মবিল লাগিয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এতে বোঝা যাচ্ছে, এক স্থানে হত্যার পর অন্য স্থানে লাশ ঝুলিয়ে রাখে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার জন্য। ঘটনাটি রহস্যে আবৃত বলে জানান দুই এসআই।
তবে রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম সাজেদুল ইসলাম জানান, সুরতহাল প্রতিবেদনে দাতাউরের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। গলার দাগও বোঝা যায় না। কাজেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি যথেষ্ট সন্দেহজনক। আর নিহতের পরিবার থেকে মামলায় আগ্রহী না হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা করেছে।
লাশ কুড়িগ্রামে পাঠানো হচ্ছে ময়নাতদন্তের জন্য। সঠিক কারণ উদঘাটন করে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।
জাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, রৌমারীর লাঠিয়ালডাঙ্গা গ্রামের আবদুস সামাদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে দাতাউর সবার বড়। রোববার সকালে ব্যাপারীপাড়ার জিঞ্জিরাম নদীর পাড়ের বাঁশঝাড়ে ঝুলন্ত লাশ দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়।
রৌমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো ও ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বলেন, নিহত দাতাউর সহজ-সরল প্রকৃতির ছিলেন। তিনি কৃষিকাজ করতেন।
নিহতের মামা আবুল হাসেম ও খালু নজরুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকেলে মা হনুফা বেগমের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান দাতাউর। যাওয়ার সময় আত্মহত্যার হুমকি দেন তিনি। দাতাউরের একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু দুই পরিবারের কেউ তা মেনে নেয়নি। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল।
নিহতের মা হনুফা বেগম বলেন, ‘অভিমান করে গেলেও রাত ১০টার দিকে বাড়িতে ভাত খেতে আসে। শুনেছি অনেক রাত পর্যন্ত বালিয়ামারী বাজারে একটি চায়ের দোকানে টিভি দেখে। এরপর বালিয়ামারী বাজারসংলগ্ন নিজেদের অপর একটি বাড়িতে চাচাতো ভাই সাদ্দামসহ ঘুমায়। এরপর কী হয়েছে তা আর কেউ বলতে পারছে না।’
নিহতের বাবা আবদুস সামাদ বলেন, ‘একটি মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিল দাতাউর। পরিবার থেকে তা মানা হয়নি।’