অভিযোগ নিষ্পত্তি না করেই ইসির গেজেট প্রকাশ শুরু

চলতি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, কেন্দ্র দখল, সহিংসতাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) সহস্রাধিক অভিযোগ জমা দিয়েছে। এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি না করেই গেজেট প্রকাশের কার্যক্রম শুরু করেছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির দৃশ্য দেখার পর এবং প্রার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরও সেগুলো তদন্ত না করেই গেজেট প্রকাশ শুরু করা হচ্ছে। কিছু কেন্দ্রে অবিশ্বাস্যভাবে ভোট পড়লেও সেসব ইউপির ফলও গেজেট আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, বিধি অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত কমিশনের বিশেষ ক্ষমতাবলে যেকোনো অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা রয়েছে। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ইউপির নির্বাচন বাতিল করতে পারে কমিশন। কিন্তু গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচনের ফলে প্রভাব ফেলে এমন অনিয়মের তদন্তের সুযোগ থাকে না। তবে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা নির্বাচনের অনিয়মের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মো. সামসুল আলম বলেন, আইনে বলা আছে রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা। প্রথম ধাপে যেসব ইউপির ফল ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোর গেজেট প্রকাশের কাজ চলছে। মঙ্গলবার থেকে তা ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের ৭১২টি ইউপির যেগুলোর বেসরকারি ফলাফল কমিশনে এসে পৌঁছেছে, মঙ্গলবার এসব ফল গেজেট আকারে প্রকাশের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে শেষ করে আনতে দেখা গেছে। গেজেট প্রকাশে কমিশনের অনুমোদনের জন্য বেশির ভাগ ইউপির ফল মঙ্গলবার কমিশনে তোলা হয়েছে। কমিশনারদের স্বাক্ষর শেষে সেগুলো গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য সরকারি ছাপাখানায় পাঠানো হয়। ক্রমান্বয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের সব ইউপির ফল গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইউপি নির্বাচনের অনিয়ম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা অভিযোগ দায়ের করেছেন। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী কমিশন বিশেষ ক্ষমতাবলে এগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারত। এতে কমিশনের স্বচ্ছতা ও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ত। কারণ গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচনের ফলে প্রভাব ফেলে বা ফল পরিবর্তন হয়, এমন অভিযোগের তদন্ত করার সুযোগ থাকে না। কিন্তু নির্বাচনী অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পর থেকে বিএনপি নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করে আসছে। অবশ্য সম্প্রতি বিএনপি অনিয়মের অভিযোগ এনে দুই ধাপের ইউপি নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দল ও প্রার্থীরা নানা অনিয়মের অভিযোগ কমিশনে দাখিল করেন। এতে কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। এসব ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে গেজেট প্রকাশ বন্ধ ও পুনর্ভোটের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু কমিশন এসব অভিযোগের বিষয়ে কান দেয়নি।
তবে বেশ কয়েকটি এলাকায় ইউপি নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের ফাইলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অনিয়মের সংবাদের কপি ও অভিযোগ সংযুক্তি হিসেবে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন সূত্র।
প্রথম ধাপে গত ২২ মার্চ ৭১২ ও দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ ৬৩৯ ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল, চতুর্থ ধাপে ৭ মে, পঞ্চম ধাপে ২৮ মে এবং ষষ্ঠ ও শেষ ধাপে ৪ জুন ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।