বৈসাবির বিকিকিনিতে মজেছে পাহাড়

পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাঙামাটির বাজারে পোশাকের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। শহরের বনরূপার বিভিন্ন শপিংমলে ক্রেতার ভিড় লক্ষ করা গেছে। তবে এর মধ্যে পাহাড়ি তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি।
উৎসবপ্রিয় পাহাড়িরা সারা বছর মেতে থাকেন নানা অনুষ্ঠানে। তবে তার সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় বর্ষবিদায়ের এই উৎসব। চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসুক, মারমারা সংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু এভাবে তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে আলাদাভাবে পালন করে এই উৎসব। উৎসব ঘিরে যেমন পোশাকের দোকানে ভিড় লক্ষ করা গেছে, তেমনি অতিথিদের অ্যাপায়নের জন্যও মুদি দোকানেও ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। রাঙামাটির বাজার এখন বৈসাবির জ্বরে আক্রান্ত।
বনরূপা বিএম কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈসাবি উপলক্ষে রাঙামাটির বাজারগুলো এখন ক্রেতায় ভরপুর। পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা দোকানে ভিড় করছেন বেশি। বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকও কিনছেন তারা।
শুধু কাপড় কেনা নয়, মানুষ কাঁচাবাজারও করে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তরকারি ব্যবসায়ী আসলাম।
বিভিন্ন শো-রুম ঘুরে দেখা গেছে, বৈসাবি ও বৈশাখের আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে বিপণিবিতানগুলো নতুন নতুন পোশাকে সাজানো হয়েছে। শহরের নিউমার্কেট, বিএম কমপ্লেক্স, আলিফ মার্কেট ও রিজার্ভ বাজার ও তবলছড়ির বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে থরে থরে এখন বৈসাবি ও বৈশাখী পোশাক সাজানো হয়েছে। দোকানগুলোতে বাঙালির বিভিন্ন ঐতিহ্যের আঁকা ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রিপিস ও গেঞ্জিসেট সবার নজর কাড়ছে। ফুটপাতের দোকানগুলোতেও বৈশাখী হাওয়া লেগেছে। সেখানেও নতুন নতুন পোশাক উঠেছে। বিভিন্ন শোরুমগুলোতে চলছে বৈসাবি অফার। এক কথায় সব জায়গায় বৈসাবির উন্মাদনা।
আগামী মঙ্গলবার পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় শুরু হচ্ছে বৈসাবির মূল আনুষ্ঠানিকতা। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজনে ব্যস্ত এখন শহর, নগর আর পাহাড়ি পল্লীগুলো। চারিদিকে আনন্দের সুরলহরী আর বৈসাবি আয়োজন।
২৯ চৈত্র মঙ্গলবার চাকমা জনগোষ্ঠীর ‘ফুল বিজু’, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ‘হাঁড়িবসু’ আর মারমা সম্প্রদায়ে সূচিকাজ। ঠিক ফুলবিজু নামে অভিহিত না হলেও এই দিন প্রায় সব পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী পানিতে ফুল ভাসিয়ে দেয়।
অন্যদিকে বাঙালি জনগোষ্ঠী পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ পালন করে। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নেয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। যেকোনো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে, সহস্র প্রতিকূলতা ছাড়িয়েও আনন্দে উৎসবে পালিত হচ্ছে বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষ।