ধানের দাম অর্ধেক!
কুড়িগ্রাম জেলার সর্বত্রই ইরি-বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এ মৌসুমে রোগবালাই কম হওয়ায় প্রতিবিঘা ফলন হয়েছে আশানুরূপ। কিন্তু ধানের উৎপাদন খরচ আর সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বর্তমান বাজার দর অনেক কম হওয়ায় কৃষকরা দারুণভাবে হতাশ।
কৃষকরা জানান, এখন তাঁরা বাজারে কাঁচা বা কম শুকনা ধান ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা দরে এবং শুকনা ধান ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছেন। এটা উৎপাদন খরচের সঙ্গে একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও উঠছে না।
অপরদিকে সরকার এবার ধানের দাম নির্ধারণ করেছে কেজিপ্রতি ২৩ টাকা। তাহলে এক মণ শুকনা ধানের দাম পড়ে ৯২০ টাকা। এই টাকায় ধান সরকারও কিনছে না, আড়তদাররাও কিনছে না। ফলে গড়পড়তায় এখন কৃষক ধানের দাম পাচ্ছেন সরকার নির্ধারিত মূল্যের অর্ধেক।
কৃষকরা আরো জানান, প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতে তাদের আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়েছে। এ ছাড়া জমি তৈরি, চারা রোপণ, সেচ, সার ও কীটনাশকের ব্যবহার করতে হয়েছে।
জেলার ধনের বড় হাট নাগেশ্বরী, যাত্রাপুর, দুর্গাপুর, রায়গঞ্জ ও ভিতরবন্দ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা ঠেলাগাড়ি, রিকশা ও ভ্যানগাড়ি বোঝাই করে ব্রি-২৮ জাতের ধান বিক্রি করতে নিয়ে এসে ক্রেতা না পেয়ে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।
অনেকে প্রয়োজন মেটাতে উপায়হীন হয়ে মণপ্রতি ধান সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে হাট-বাজারগুলোতে আড়তদাররা নিজেরা ধান কেনাকাটা না করে ছোট ছোট ফড়িয়া ও পাইকারদের মাধ্যমে অল্প মূল্যে ধান কিনে গুদামজাত করছেন বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
ভিতরবন্দ এলাকার কৃষক বাচ্চু মিয়া জানান, যেখানে এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় সাত-আট হাজার টাকা, সেখানে বাজারে প্রতি মণ ভেজা ধান বেচা কেনা হচ্ছে সাড়ে ৪০০ টাকা ও শুকনো ধান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা দরে।
বাচ্চু মিয়ার দাবি, ‘গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করেছি। ধান কেটেছি শুনে ব্যাংকের লোক বাড়িতে এসে টাকা চাওয়ায় পাঁচ মণ ধান নিয়ে ভিতরবন্দ বাজারে এসে দেখি ক্রেতা নেই। তাই ফেরত নিয়ে যাচ্ছি।’
নাগেশ্বরীর কৃষক মাহতাব উদ্দিন জানান, ৩০ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদ করেছি। বীজতলা থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত প্রতি বিঘায় যে খরচ হয়েছে তা ধান বিক্রি করে পোষাচ্ছে না। কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলে ধান চাষ ছেড়ে দিতে পারে।
ভিতরবন্দ এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোকছেদ আলী জানান, ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। বাজার দরের ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু নেই।
নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাছুদুর রহমান জানান, ‘টিভির সংবাদে শুনেছি সরকার প্রতি কেজি ধান ২৩ টাকা মূল্য নির্ধারণ করেছেন। কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের জন্য এখনো উপজেলাভিত্তিক বরাদ্দ পাইনি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মকবুল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ আট হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে এক লাখ নয় হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে ধানের দাম একটু কম হলেও সরকারিভাবে ক্রয় শুরু হলে ধানের দাম বৃদ্ধি পাবে।