‘রিভিউ নিষ্পত্তির পর পরবর্তী পদক্ষেপ’
রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন নিষ্পত্তির পর পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। আজ শনিবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর আইনজীবীরা সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সকাল ১১টা ১০ মিনিটে অ্যাডভোকেট শিশির মনিরের নেতৃত্বে পাঁচজন আইনজীবীর একটি দল কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেন। তাঁরা ১১টা ৪৫ মিনিটে বের হয়ে আসেন। আগামীকাল কামারুজ্জমানের রায় রিভিউ আবেদনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। সে ব্যাপারেই কথা বলতেই তাঁরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
শিশির মনির বলেন, কামারুজ্জামান শারীরিকভাবে সুস্থ এবং মানসিকভাবে দৃঢ় আছেন। তিনি রিভিউ নিষ্পত্তির পর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবেন। কামারুজ্জামান জানিয়েছেন, আপাতত মিথ্যের জয় হলেও সত্যের একদিন জয় হবে। সেদিকেই তিনি তাকিয়ে আছেন। যে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন তিনি দেখেছেন, সেই স্বপ্ন একদিন তরুণ সমাজ বাস্তবায়িত করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এর সঙ্গে তিনি আবারও দাবি করেছেন, তাঁকে যে অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তার সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া অন্য আইনজীবীরা হলেন এহসান এ সিদ্দিক, মশিউল আলম, মোজাহিদুল ইসলাম ও এম রহমান আকন্দ।
গত বছরের ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর তিন বিচারক হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বেঞ্চের বিচারকরা সই করেন। পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়।
রায় প্রকাশের পর কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। লাল কাপড়ে মোড়ানো এ পরোয়ানার সঙ্গে কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিও পাঠান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের শুনানি আগামী কাল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ওই বছরের ৬ জুন ওই সাজা বাতিল করে খালাস চেয়ে কামারুজ্জামান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো আপিল দাখিল করেনি। আসামিপক্ষের শুনানির বিপরীতে বক্তব্য পেশ করে রাষ্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনালের দণ্ড বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।