‘প্রধানমন্ত্রী, বিচারপতির বিচার আল্লাহ করবেন’
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, যেসব বিচারপতি মামলার রায় দিয়েছেন তাঁরা এবং যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন আল্লাহ তাঁদের বিচার করবেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে বের হয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তাঁর বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি।
আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিটে পরিবারের সদস্যরা কারাগারে প্রবেশ করেন। ৭টা ৫০ মিনিটে তাঁরা বের হন।
হাসান ইকবাল জানান, তাঁর বাবা বলেছেন, ‘এটি একটি ভ্রান্ত রায়। দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং যেসব বিচারপতি এ মামলার রায় দিয়েছেন, যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁদের বিচার আল্লাহ তায়ালা করবেন। নতুন প্রজন্ম একদিন সত্যের উদঘাটন করবে। আমার বিশ্বাস, আমার মৃত্যুর পর এদেশে ইসলামী আন্দোলন আরো জাগ্রত হবে।’
হাসান ইকবাল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত রায়ের কপি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়নি। তাই রায়ের কপি পাওয়ার পর ক্ষমাপ্রার্থনার বিষয়ে উনি (কামারুজ্জামান) সিদ্ধান্ত নেবেন। এর আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না। নিয়ম অনুযায়ী আমাদের সরাসরি দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাঁকে একটি দরজার বাইরে রেখে আমাদের সাথে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে। এটি যদি শেষ দেখা হয়, তাহলে আমাদের একটা আফসোস থেকে যাবে যে, আমরা পিতাকে শেষবারের জন্য বুকে জড়িয়ে ধরতে পারিনি। তবে আমরা বিশ্বাস করি, এ দেখা শেষ নয়। আমরা দেখা করার সুযোগ পাব।’
কামারুজ্জামানের এই ছেলে আরো বলেন, ‘যে মামলায় তাঁকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে, সে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সাংবাদিকদের ও বিচারপতিদের সামনে ভিন্ন ভিন্ন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এতেই প্রমাণিত হয়, এটি মিথ্যা বক্তব্য ও মিথ্যা সাক্ষ্য। দণ্ড কার্যকর হওয়ার পর তাঁর ইচ্ছার বিষয়ে তিনি বলেছেন, তাঁকে যেন শেরপুরে তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে এতিমখানার পাশেই কবর দেওয়া হয়।’
কামারুজ্জামান মানসিকভাবে শক্ত এবং শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন বলেও জানান হাসান ইকবাল। তিনি বলেন, ‘রায়ে তিনি (কামারুজ্জামান) বিচলিত নন। এমনকি তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যও এই রায়ে বিচলিত নন। কারণ এটি একটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক রায়। রায় ওনার হাতে পৌঁছার পর আমাদের আইনজীবীরা দেখা করবেন এবং প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কথা বলবেন। আশা করি, আমরাও আরেকবার দেখা করব, এটাই শেষ দেখা নয়।’
এর আগে আজ সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিটে প্রবেশ করেন কামারুজ্জামানের স্ত্রী নুরুন্নাহার, বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি, ছোট ছেলে হাসান ইমাম ওয়াফি, মেয়ে আতিয়া নূরসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য। তাঁদের কাছে থাকা অনুমতিপত্র পরীক্ষা করে কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
আজ দুপুরে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর পরিবারকে চিঠি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। তবে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েও পাননি তাঁর আইনজীবীরা। দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলন আইনজীবী শিশির মনির এ কথা জানান।
এর আগে সকাল ৯টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। চলতি বছর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়। ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।