দুই উলফা নেতার যাবজ্জীবন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/04/08/photo-1428483232.jpg)
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা মেজর রঞ্জন চৌধুরী ও তাঁর সহযোগী প্রদীপ মারাককে দুটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন কিশোরগঞ্জের আদালত। সন্ত্রাস দমন ও অস্ত্র আইনে করা দুটি মামলায় আজ বুধবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম এ রায় দেন।
দুই আসামিকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।
এদিকে, রায় ঘোষণা শেষে দুই আসামিকে আদালত থেকে হাজতে নেওয়ার পথে রঞ্জন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, মিথ্যা ও অন্যায়ের কাছে তিনি হেরে গেছেন এবং ন্যায়বিচার পাননি।
আজ রায় দেওয়ার সময় বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেন, এ মামলার ঘটনার সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সুসম্পর্কের বিষয়টি জড়িত। আসামিরা একটি বেআইনি ও নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তারা নাশকতামূলক কাজের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক অবনতির নেতিবাচক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। প্রসিকিউশন আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৭ জুলাই উলফার ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা মেজর রঞ্জন ও তাঁর এ দেশীয় সহযোগী প্রদীপ মারাক কিশোরগঞ্জে আটক হন। ওই দিন ভোর পৌনে ৫টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৯ ভৈরব ক্যাম্পের একটি দল কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় লক্ষ্মীপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে থেকে তাঁদের আটক করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে চারটি গুলি, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি নাইন এমএম বিদেশি পিস্তল, চারটি হাতবোমা ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
আটকের পরপরই তাঁদের ঢাকার র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে রঞ্জন নিজেকে উলফার নেতা হিসেবে স্বীকার করেন। সে সঙ্গে উলফার সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতিতে অবস্থান এবং স্থানীয় সাবিত্রি দ্রুমকে বিয়ের কথা জানান।
এ ঘটনায় র্যাব-৯ ভৈরব ক্যাম্পের উপসহকারী পরিচালক মো. করিম উল্লাহ বাদী হয়ে অনুপ্রবেশ, সন্ত্রাস দমন আইন, অস্ত্র আইন ও বিস্ফোরক আইনে আটক দুজনের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় পৃথক চারটি মামলা করেন। এর মধ্যে সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলায় ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর এবং অস্ত্র আইনের মামলায় একই বছরের ২৬ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুটি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ভৈরব থানার উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবির।
অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে করা অপর মামলাটিতে বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। একই তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলায় ২০১০ সালের ২৯ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
আর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনায় করা মামলাটি আদালত ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর স্থগিত ঘোষণা করেন। অনুপ্রবেশের সর্বোচ্চ সাজা তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় আদালত তা স্থগিত করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আজিজুল হক এবং আসামিপক্ষে মিজানুর রহমান ও সাইদুর রহমান মামলা দুটি পরিচালনা করেন।
রায় ঘোষণা শেষে শাহ আজিজুল হক সাংবাদিকদের জানান, সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। আদালত রঞ্জনকে দুটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা দিলেও প্রদীপকে শুধু সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে অস্ত্র আইনের মামলায় খালাস ঘোষণা করেছেন।
সাইদুর রহমান বলেন, তথ্য-উপাত্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে। আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি দাবি করে তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান।