‘শেষ ইচ্ছা’ মতো শেরপুরেই দাফন, বললেন ওয়ামি
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর হওয়ার পর তাঁর লাশ শেরপুরেই দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে শেরপুরেই কবর দেওয়া হবে।
তবে এর বিরোধিতা করছে শেরপুরের মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলসহ কয়েকটি সংগঠন। কামারুজ্জামানের লাশ শেরপুরে নেওয়া হলে তাঁরা তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। আর এসব বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি আজ শনিবার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওনার (কামারুজ্জামানের) শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী শেরপুরে ওনার প্রতিষ্ঠিত কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পাশেই তাঁকে কবর দেওয়া হবে।’ দাফনের সুযোগ দেওয়া হবে না বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে মন্তব্য করে তা নাকচ করে দেন ওয়ামি।
শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার নুরুল ইসলাম হীরু বলেন, ‘জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ তাদের আমরা এর আগে আহ্বান জানিয়েছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছি, কামারুজ্জামানের লাশ যেন শেরপুরে না আনা হয়। নইলে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে ধর্মঘট, অবরোধ, হরতালসহ মিছিল-মিটিং করে এটা আমরা প্রতিহত করব। এটাই আমাদের ঘোষণা।’
শেরপুরের সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘নুরুল ইসলাম হীরু মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে কামারুজ্জামানের লাশ শেরপুরে দাফন না করার যে দাবি জানিয়েছেন তাঁর সাথে আমরা একমত।’
তবে কামারুজ্জামানের বড় ভাই তাজুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, ‘আমরা আমাদের ভাইয়ের লাশ শান্তিমতো দাফন করতে চাই। প্রশাসন যেন আমাদের শান্তিতে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করে দেয়।’
লাশ দাফনের ব্যাপারে সরকার থেকে কোনো নির্দেশ আছে কিনা জানতে চাইলে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পুলিশকে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হলে তা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’
কামারুজ্জামানকে দাফন করা নিয়ে এ দ্বন্দ্বের বিষয়ে ৯ এপ্রিল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, ‘ফাঁসির পর তাঁকে কোথায় দাফন করা হবে, তা তাঁর আত্মীয়স্বজনের ব্যাপার। কেউ বাধা দিলে সেটা মোকাবিলা করে কামারুজ্জামানকে কোথায় দাফন করবে, সেটা তাঁরাই বুঝবেন। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা একজন যুদ্ধাপরাধীকে দাফনের ক্ষেত্রে বাধা দিতেই পারেন। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো ভূমিকা নেবে না।
এদিকে, আজ বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর পরিবারকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, আজ শনিবারই ফাঁসি কার্যকর করা হবে। আর তাই শেষ দেখার জন্য পরিবারকে দেখা করতে চিঠি দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।