অভিযোগ প্রমাণে সাত দিন সময় পেলেন নাছির
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাত দিনের মধ্যে প্রমাণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জ্যোতির্ময় দত্ত স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর পাঠানো হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আ জ ম নাছিরের অভিযোগকে গুরুতর হিসেবে আমরা আমলে নিয়েছি। এটি খতিয়ে দেখা হবে।’
এর কিছুক্ষণ পরই স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রণালয় আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে জবাব তলবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁর অভিযোগ গুরুতর। তাঁর কাছে কী প্রমাণ আছে—তা মন্ত্রণালয়ের জানা আবশ্যক।
চট্টগ্রামের মেয়র নাছিরের বরাবর পাঠানো চিঠিতে যা বলা হয়েছে :
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জ্যোতির্ময় দত্ত স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প অনুমোদন এবং বরাদ্দ পেতে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘুষ চান; মন্ত্রণালয়ের জনৈক যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা আপনার কাছে একটি নতুন পাজেরো জিপ চেয়েছেন, ৫ শতাংশ ঘুষ দিলে আপনি ৮০ কোটির পরিবর্তে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতেন ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করে গত ১০ আগস্ট চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মর্মে ১১ আগস্ট বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। আপনার আনীত এ অভিযোগগুলো গুরুতর। এতে মন্ত্রণালয় তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে, যার প্রমাণ প্রদান আবশ্যক। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোন কর্মকর্তা কোথায় কখন আপনার কাছে ঘুষ দাবি করেছেন, কে কোথায় কখন পাজেরো জিপ চেয়েছেন, কোন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে কোন কর্মকর্তা জটিলতার সৃষ্টি করেছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক উপযুক্ত প্রমাণ আগামী সাত দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
গত বুধবার চট্টগ্রাম নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘চট্টগ্রাম নগর সংলাপ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাছির বলেন, পরিকল্পিত ও পরিচ্ছন্ন নগর গড়ার কাজে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
নাছির অভিযোগ করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তাকে ৫ শতাংশ করে ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় সিটি করপোরেশনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে কোন মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করছে না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি নাছির। তিনি বলেন, ‘নগরের উন্নয়নের জন্য আমার চেষ্টা ও আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু এখানে অনেকের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাকে বলা হলো, করপোরেশনের জন্য যত টাকা চাই, দেওয়া হবে থোক বরাদ্দ হিসেবে, তবে তার জন্য ৫ শতাংশ করে দিতে হবে। আমি বললাম, এই টাকা কোথায় পাব? বললেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে ম্যানেজ করেন। তখন আমি বললাম, এটা পত্রিকায় নিউজ হবে না? ঠিকাদারও তো আমাকে চোর ভাববে? আমি কীভাবে নেব? কেন নেব?’
‘আমি কি এটা লিখে দিতে পারব যে মন্ত্রণালয়ে দিতে হবে, এই জন্য ৫ শতাংশ করে টাকা কাটব? তখন বলে যে না, এটা বলা যাবে না। আপনি ম্যানেজ করেন। আমি বললাম, না, এটা পারব না। বলল, তাহলে হবে না। এ কারণে আমি শুধু ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলাম। যদি ৫ শতাংশ করে দিতে পারতাম, তাহলে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা আনতে পারতাম।’
চট্টগ্রামের মেয়রের এ বক্তব্য নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় চলছে। বক্তব্যের একদিন পর বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠকে অংশ নেন নাছির।
বৈঠকের পর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নাছির বলেন, ‘আমি শিগগিরই বিষয়টি খোলাসা করব এবং নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করব।’