চলে গেল ধলা পাহাড়ও
বাগেরহাটের হজরত খানজাহান (রহ.)-এর মাজারের দীঘির প্রায় শতবর্ষী কুমির ‘ধলাপাহাড়’ মারা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দীঘির পানিতে কুমিরটির মৃতদেহ ভাসতে দেখেন মাজারে খাদেম ও দীঘির পারের বাসিন্দারা।
বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলে তারা এসে মৃত কুমিরটি দীঘি থেকে তোলে।
মাজারের খাদেম হুমায়ুন কবির ফকির জানান, কয়েক শ বছর ধরে খানজাহান (রহ.)-এর মাজারে দীঘিতে ‘ধলা পাহাড় ও কালা পাহাড়’ নামের কুমিরের বংশধররা বসবাস করছিল। এর আগে ২০০৬ সালে মারা যায় এই জুটির কুমির কালাপাহাড়। আজ সকালে ধলাপাহাড়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই জুটির সমাপ্তি হলো।
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুখেন্দু শেখর গায়েন জানান, ধলা পাহাড় লম্বায় প্রায় ৯ ফুট। এই প্রজাতির মিঠা পানির কুমির সাধারণত ১১ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। কুমিরটির বয়স আনুমানিক ১০০ বছর হতে পারে।
Pan Steatites রোগে আক্রান্ত হয়ে অথবা খাবারে বিষক্রিয়ার কারণে এই স্ত্রী কুমিরটির মৃত্যু হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে বলে জানান তিনি।
প্রখ্যাত সুফিসাধক এবং বৃহত্তর যশোর ও খুলনা জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত এলাকার আঞ্চলিক শাসক খানজাহান আলী। ধারণা করা হয়, তৈমুরের দিল্লি আক্রমণের (১৩৯৮ খ্রি.) পর পরই বাংলায় আসেন তিনি। বৃহত্তর যশোর ও খুলনা জেলায় কয়েকটি শহর প্রতিষ্ঠা, মসজিদ, মাদ্রাসা, সরাইখানা, মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং বহুসংখ্যক দীঘি খনন করেন খানজাহান আলী। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কীর্তি হলো বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ। আনুমানিক ১৪৫০ সালে এই মসজিদ নির্মাণ ও তার পাশে একটি দীঘি খনন করান তিনি। এই দীঘিতে তিনি ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’ নামে একজোড়া কুমির ছাড়েন। কুমির দুটিকে নিজেই খাবার খাওয়াতেন বলেও জানা যায়। সেই থেকে ওই কুমির দুটির বংশধররা এই দীঘিতে বসবাস করছিল। এদের মধ্যে স্ত্রীগুলোকে ধলাপাহাড় এবং পুরুষগুলোকে কালাপাহাড় নামেই ডাকা হতো। আজ সবশেষ ধলাপাহাড় মারা যাওয়ার পর অবসান হলো কালাপাহাড়-ধলাপাহাড় জুটির।