মেঘালয়ের রাস্তায় ইতস্তত ঘুরছিলেন সালাহ উদ্দিন!
বিএনপির ‘নিখোঁজ’ যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের রাস্তায় ইতস্তত ঘোরাফেরা করছিলেন! এ সময় তার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাঁকে আটক করে স্থানীয় পুলিশ। পরে তাঁকে মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্স (মিমহ্যানস) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আজ মঙ্গলবার ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের দ্য নর্থ-ইস্ট টুডে পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে হাসপাতালে পুলিশের সঙ্গে দাঁড়ানো অবস্থায় সালাহ উদ্দিন আহমেদের একটি ছবিও দেখানো হয়েছে।
ছবিতে দেখা যায়, সাদা পোশাক পরিহিত সালাহ উদ্দিনের গায়ে জড়ানো রয়েছে একটি খয়েরি-সাদা চেক চাদর। তাঁর হাত ধরে রেখেছেন একজন পুলিশ সদস্য। পেছনে দেখা যায় হাসপাতালের একজন নার্সকে।
নর্থইস্ট টুডের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের বিরোধীদলের মুখপাত্র সালাহ উদ্দিন আহমেদ কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। আজ সকালে তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ দাবি করেন যে, ভারতের মেঘালয়ের একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বামীর সঙ্গে তাঁর টেলিফোনে কথা হয়েছে।’
“আজ মিমহ্যানস হাসপাতালে নিয়ে আসার পর পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে রোগী সালাহ উদ্দিন আহমেদ নিজেই নিজের পরিচয় দেন। জানান, তিনি বিএনপির একজন নেতা। যখন তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি শিলংয়ে কীভাবে এসেছেন, তিনি বলেন, ‘আমি জানি না’।”
‘সালাহ উদ্দিন আহমেদের শরীর ভালো না থাকায় মেঘালয়ের পুলিশ এখনো তাঁকে ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি।’
মেঘালয়ের পূর্ব খাসী পাহাড় পুলিশের সুপারিনটেডেন্ট এম খারক্রাং নর্থ-ইস্ট টুডেকে বলেন, ‘আমরা তাঁকে আদালতে পাঠিয়ে দিতাম, কিন্তু তাঁর শরীর অসুস্থ হওয়ার কারণে প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে দিতে হয়েছে।’
ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। এখন তাঁকে শিলং সদর হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে শিলং শহরের পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট বিবেক সিয়ামের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, একজন ব্যক্তি উদভ্রান্তের মতো ঘুরছেন, এমন খবর পেয়েই তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, ‘তার (সালাহ উদ্দিন আহমেদ) দেহে কোনো চোট বা আঘাতের চিহ্ন ছিলো না, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তিনি গুছিয়ে দিতে পারছিলেন না। তাই তাকে একটি মানসিক হাসপাতালে রাখা হয়েছে।’
গতকাল সোমবার সকালে শিলংয়ের ‘রাস্তায় ইতস্তত ঘোরাঘুরি করার সময়’ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা আটক করে বলে জানান এম খারক্রাং। সেখান থেকে তাঁকে প্রথমে শিলং সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মিমহ্যানসে পাঠানো হয়।
মিমহ্যানস হাসপাতালের অতিরিক্ত সুপারিনটেডেন্ট ডা. ডি সিনকন জানান, গতকাল সোমবার বিকেলে পুলিশ একজন ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসে। তিনি বলেন, ‘নিজেকে সালাহ উদ্দিন আহমেদ দাবি করা ওই ব্যক্তিকে মিমহ্যানসে নিয়ে আসার পর তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। আমাদের মনোচিকিৎসকরা দেখেন যে, ওই ব্যক্তিটি মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। কিন্তু তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যার কথা জানালে তাঁকে আবার শিলং সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’
এর আগে আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ জানান, ভারতের কোনো একটি স্থান থেকে তাঁকে ফোন করেছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
পরে এ ব্যাপারে কথা বলতে দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গুলশানের বাসভবনে দেখা করেন হাসিনা আহমেদ।
এরপর দুপুর পৌনে ৩টার দিকে সাংবাদিকদের হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে, দেশবাসী সবার দোয়ায়, আপনাদের দোয়ায় ইনশা আল্লাহ আমার স্বামী বেঁচে আছেন। উনার সাথে আমার কথা হয়েছে ঘণ্টা দুয়েক আগে। ইন্ডিয়ার মেঘালয়ের একটি মানসিক হাসপাতালে, মেন্টাল হসপিটালে উনি আছেন। আমরা দ্রুত উনার ওখানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এ সময় হাসপাতালের নাম হাসিনা জানান, মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের মিমহানস মেন্টাল হসপিটাল। উনি কীভাবে সেখানে গেছেন, সে বিষয়ে কোনো কথা হয়নি বলে জানান তিনি।