ট্রাভেল পাস পেলেন বিএনপিনেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ট্রাভেল পাস পেয়েছেন। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর তিনি আসন্ন ঈদের আগেই দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছে বিএনপির মিডিয়া সেল।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল সোমবার (১২ জুন) রাতে এ সংক্রান্ত কাগজ পেয়েছেন তিনি (সালাহউদ্দিন আহমেদ)। বর্তমানে ভারতের শিলংয়ে অবস্থান করছেন তিনি। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে তিনি কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরবেন।’
সালাহউদ্দিন আহমেদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় গত ৮ জুন থেকে। এদিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জনকূটনীতি) মোহাম্মদ রফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বিক সহযোগিতা করছে।
২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি সারা দেশে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচি চলাকালে অজ্ঞাত স্থান থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে বিবৃতি প্রকাশিত হচ্ছিল। ওই কর্মসূচিকে ঘিরে প্রায় তিন হাজার যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আহত হয় প্রায় দুই হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে প্রায় ৫০০ জন চিরতরে পঙ্গু হন।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ২০১৫ সালের ১১ মার্চ সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী কক্সবাজার-১ (পেকুয়া-চকোরিয়া) আসনের বিএনপির সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ দাবি করেন, ১০ মার্চ রাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তার স্বামীকে তুলে নেওয়া হয়। ঘটনায় রীতিমতো হৈ-চৈ পড়ে যায়। দেশ-বিদেশ থেকে বিবৃতি ও প্রতিবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ দূতাবাসগুলোর কাছে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হয় বিএনপি ও সালাহউদ্দিন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে।
এদিকে, ২০১৫ সালের ১২ মে ভারতের মেঘালয়ের একটি হাসপাতালে সালাহউদ্দিন আহমেদের হদিস মেলে। মেঘালয়ের শিলং পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৫ সালের ১১ মে স্থানীয়দের মাধ্যমে শিলং পলোগ্রাউন্ড এলাকায় উদ্ভ্রান্তের মতো একজনকে ঘুরতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি ভারতীয় নন বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। ভারতে প্রবেশের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও ছিল না তার কাছে। তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শিলংয়ের ইস্ট খাসি হিলস থানায় নেয় পুলিশ। থানায় সালাহউদ্দিন আহমেদ নিজেকে বাংলাদেশের সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলে পরিচয় দেন। এরপর পুলিশ তাকে প্রথমে মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোলজিক্যাল সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাকে শিলং সিভিল হাসপাতাল ও নর্থ ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল সায়েন্সেস (নেগ্রিমস) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতালে থাকার সময় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ টেলিফোনে কথা বলেন। খালেদা জিয়া তাকে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে আশ্বস্ত করেন।
২০১৫ সালের ৩ জুন ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর আসামিকে বেকসুর খালাস দেন শিলং আদালতের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ডিজি খার সিং রায়। রায়ের বিরুদ্ধে ভারতের উচ্চ আদালতে আপিল করে দেশটির সরকার। তখন থেকেই সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতের আসামের শিলং এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকছেন। সোয়া আট বছর সালাউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা এবং কিছু নেতাকর্মী বিএনপির এই নেতার নিয়মিত খোঁজ-খবর নিয়েছেন। কিছু কিছু নেতা সরাসরি তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। অনেকেই ভারতে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাতও করেছেন। সালাহউদ্দিন আহমেদকে আইনি সহায়তা করছেন মেঘালয় রাজ্যের অপরাধবিষয়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস পি মহন্ত।