‘আর পড়াশোনা নিয়ে চাপ দেব না, বাবা ফিরে আসো’
‘আজ ১৬ দিন তোমাকে না পেয়ে পৃথিবী অচল। অনেক কষ্ট করে তোমাকে বড় করেছি।’...‘বাবা, তুমি যা পারো তাই করে খেয়ো, আমরা আর পড়াশোনা নিয়ে চাপ দেব না।’ ‘ফাহিম, তুমি যেখানেই থাকো ফিরে আসো। সরাসরি পরিবার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হোক, তুমি ফিরে আসো। তোমাকে হারিয়ে আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে।’
গণমাধ্যমের সামনে ছেলের প্রতি এমন আকুতি এক বাবার। পেশায় তিনি আইনজীবী। নাম আয়ুব খান বাবুল। তার ছেলে ফাহিম ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের একটি নতুন সংগঠনের অনুসারী বলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছ থেকে পেয়েছেন তথ্য। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন (সিটিটিসি) যখন সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ের অভিযান চালিয়ে ওই সংগঠনে ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে, তখন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম পালিয়ে যায়। একই সময়ে পালিয়ে যায় ডাক্তার জামিল।
জানা গেছে, ফাহিম যশোর জেলা স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি জেলার কোতোয়ালি উপজেলায়। তার বাবা যশোর জেলায় কর্মরত আইনজীবী আয়ুব খান বাবুল। ছেলেকে উগ্রবাদী পথ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
আয়ুব খান বাবুল বলেন, ‘স্কুলে পড়ার সময়ে পড়াশোনাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখা ফাহিম খান (১৭) গত ২৮ জুলাই সকালে বাসা থেকে কাউরে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ। যশোর জেলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে জিপিএ-৫ গোল্ডেন রেজাল্ট নিয়ে পাস করে নটরডেম কলেজে ভর্তি হয় ফাহিম। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে সে হোস্টেলেই থাকত৷ প্রথম বর্ষে ভালো ফলাফল করলেও পরবর্তীতে অসুস্থ থাকায় পড়াশোনায় একটা গ্যাপ পড়ে। ফলে, আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। এ কারণে সে মানসিকভবে একটু বিষন্ন ছিল। পাশাপাশি তার পিছিয়ে যাওয়ার কারণে পরিবার থেকে একটু চাপ দেওয়ায় নিজেকে একটু আড়াল করে রাখত।
ফাহিমের বাবা আয়ুব খান বাবুল বলেন, ‘পারিবারিক চাপ হোক কিংবা মোবাইল ফোন বা কোনো ব্যক্তি ও সংগঠনেট মাধ্যমে হোক কোনো একটি ভাবে সে এই সংগঠনের মাধ্যমে জড়িয়েছে। সে নিখোঁজ হওয়ার পরে ২৮ জুলাই যশোরের কোতওয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর তার সন্ধান পেতে গোয়েন্দা পুলিশ ও ঢাকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমি আপনাদের মাধ্যমে আমার ছেলেকে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ছেলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আয়ুব খান বাবুল বলেন, ‘ফাহিম তুমি যেখানেই থাকো ফিরে আসো। সরাসরি পরিবার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হোক তুমি ফিরে আসো। তোমাকে হারিয়ে আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে। বাবা তুমি যা পারো তাই করে খেয়ো, আমরা আর পড়াশোনা নিয়ে চাপ দেব না। তুমি যদি অসৎ ব্যক্তি বা সংগঠনের মাধ্যমে ভুল পথে যেয়ে থাক, তুমি ফিরে আস। আজ ১৬ দিন তোমাকে না পেয়ে পৃথিবী অচল। অনেক কষ্ট করে তোমাকে বড় করেছি।’
জানা গেছে, চার ভাই-বোনের মাঝে বড় ফাহিম গাইনোকমাসিয়া বা একটি নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া রোগে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল।
ছেলের পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে আয়ুব খান বাবুল বলেন, ‘কোরবানি ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসার পরে দেখতে পাই তার মুখে দাঁড়ি। মাঝে মাঝে নামাজ পড়ত। অথচ, রোজার সময় হাফ প্যান্ট পরত। তেমনভাবে ধর্মপালন করত না। বাড়ি ছাড়ার আগে বন্ধুদের ঘুর যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু হঠাৎ, করে পরিবর্তন আসে, একাই চলে যায়। তবে, যাওয়ার সময় কোনো টাকা পয়সা নিয়ে যায়নি।’