ভাষাসৈনিক কয়েস উদ্দিন আর নেই
জামালপুরে ভাষাসৈনিক, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও চারণ কবি কয়েস উদ্দিন সরকার বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) দিনগত রাত ১১টার দিকে শহরের গেইটপাড় এলাকায় নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কয়েস উদ্দিন সরকার পৌর শহরের বেলটিয়া গ্রামের মৃত ছইমুদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ছিলেন কয়েস উদ্দিন সরকার। শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়-অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক গান রচনা করেছেন তিনি। আর তাতে নিজেই সুরারোপ করে গেয়ে বেড়াতেন। শহরের যেখানেই প্রগতিশীল রাজনৈতিক সভা চলুক, তিনি থাকতেন প্রথম কাতারে। গানের আবদার করলে মঞ্চে গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখতেন। তিনি ছিলেন মওলানা ভাসানীর একনিষ্ঠ অনুসারী।
কয়েস উদ্দিন ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী চেতনায় বিশ্বাসী। তিনি প্রাণের টানে ‘ব্রিটিশ খেদাও’ আন্দোলন করেছেন। শৈশবেই তিনি বাবা হারান, সাংসারিক অভাব অনটনে খুব বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি। ১৯৫২ সালে জিন্নাহ যখন ঢাকার কার্জন হলে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার ঘোষণা দেন, তখনই শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। কয়েস উদ্দিন সরকার যোগ দেন ভাষা আন্দোলনে। তিনি যাদের সঙ্গে জামালপুরে ভাষা আন্দোলন করেছিলেন, তারা হলেন—তৈয়ব আলী, তাছির মোক্তার, মোয়াজ্জেম উকিল, হায়দর আলী মল্লিক, নাসির সরকার।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে গান লিখে এবং নিজেই গেয়ে বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করতেন কয়েস উদ্দিন সরকার। ২১ ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানিদের গুলিতে রফিক, বরকত-সালামরা শহীদ হলে সারা দেশে আন্দোলন বেগবান হয়। পরবর্তীতে বাঙালিদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানিরা। পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। আইয়ুববিরোধী গান রচনা করায় তিনি এক বছর কারাভোগ করেন।
মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘জামালপুরের সর্বশেষ ভাষাসৈনিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী কয়েস উদ্দিন সরকার বার্ধক্যজনিত কারণে শুক্রবার (২৫ আগস্ট) দিনগত রাতে গেইটপাড় এলাকায় নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। শনিবার সকালে তাঁর গ্রামের বাড়ি বেলটিয়ায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জামালপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁর মরদেহ রাখা রাখা হবে। অকুতোভয় এই বীরের অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে দান করা হবে। কয়েস উদ্দিন সরকারের মৃত্যুতে জামালপুরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সবাই গভীর শোকাহত।’