পুড়েছে স্বপ্ন, ছাই উড়িয়ে স্বর্ণের খোঁজে ব্যবসায়ীরা
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন।’ বিখ্যাত এই উক্তির সঙ্গে মিল রেখেই যেন ছাই উড়িয়ে স্বর্ণ খোঁজার চেষ্টা করছেন নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীরা। এ দৃশ্য রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পুড়ে যাওয়া কৃষি মার্কেটের।
আজ শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা। হঠাৎ চোখ আটকে গেল বয়স্ক এক ব্যক্তির দিকে। নাম আব্দুর রহিম। তার মাথায় কয়লা ও ছাইয়ের বস্তা তুলে দিচ্ছেন আরও দুজন। সেই বস্তা নিয়ে বের হচ্ছেন তিনি। এভাবে একে একে বের করা বস্তাগুলো রাস্তায় রাখা ভ্যানে সাজানো হচ্ছে।
পোড়া মার্কেটের ভেতরে নন্দন জুয়েলার্স নামের একটি স্বর্ণের দোকান থেকে কয়লা ও ছাইয়ের বস্তাগুলো বের করা হচ্ছে। এগুলো জুয়েলার্সের মালিক নূরে আলমের বাসায় নেওয়া হবে। এরপর সেই ছাই উড়িয়ে, কয়লা খুচিয়ে দেখা হবে, তাতে স্বর্ণ আছে কি-না।
নন্দন জুয়েলার্সের সামনেই গিয়ে দেখা হয় মালিক নূরে আলমের সঙ্গে। এই প্রতিবেদককে কথা প্রসঙ্গে জানান, মার্কেটে আগুন লাগার পরও কিছু স্বর্ণ উদ্ধার করা গেছে। বাকি অনেক স্বর্ণ পাওয়া যায়নি। শেষ আশা এখন পুড়ে যাওয়া ছাই ও কয়লার ভেতর। এগুলো বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। ছাই উড়িয়ে, কয়লা উলটপালট করে দেখবেন এর মধ্যে স্বর্ণ আছে কি-না।
জুয়েলার্সের ভেতরে সাজানো সব কাঠ-আলমারি পুড়ে কয়লা ও ছাইয়ে পরিণত হয়েছে। ভেতর থেকে যখন ছাই-কয়লার বস্তা বের করা হচ্ছিল, তখন সেখানে দাঁড়িয়ে এসবের তদারকি করছিলেন নন্দন জুয়েলার্সের ম্যানেজার মো. রাকিব।
কথা প্রসঙ্গে রাকিব বলেন, ‘একটি স্বর্ণের দোকানে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার মালামাল থাকা স্বাভাবিক বিষয়। আমরা অর্ধেকের মতো স্বর্ণ খুঁজে পেয়েছি। যখন আগুন নেভানো হয়েছিল, তখন কিছু মানুষ ভেতরে ঢুকেছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ স্বর্ণ বের করতে পারেন। আর শেষ আশা হিসেবে ছাই আর কয়লা বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। এগুলো বাসায় চেক করা হবে। আশা করছি, কিছু স্বর্ণ পাব এখান থেকে।’
রাকিব বলেন, ‘আমাদের দোকানের এ গলিতে আরও সাতটি স্বর্ণের দোকান ছিল। সবারই একই অবস্থা। তারা সকালেই ছাই ও কয়লা নিয়ে গেছেন। কৃষি মার্কেটে ২০টির মতো স্বর্ণের দোকান। এর মধ্যে অধিকাংশ দোকান পুড়েছে। কারও ক্ষতি বেশি হয়েছে, কারও কম।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা ৪৩ মিনিটে আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও কয়েকশ দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। পুড়ে ছাই হয়েছে এসব দোকানের মালামাল। সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। কৃষি মার্কেট মালিক সমিতির দাবি, অগ্নিকাণ্ডে ২০৫টি স্থায়ী ও ১২০টি ছোট দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব দোকানে কাজ করে দুই হাজারের বেশি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ মার্কেটে সবজির দোকানের পাশাপাশি জুতার দোকান, স্বর্ণের দোকানসহ অনেক ধরনের দোকান ছিল।