একাদশ সংসদ প্রত্যাশিত মাত্রায় ভূমিকা রাখতে পারেনি : টিআইবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশর (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সংসদ প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পেরেছে, এমন বলার সুযোগ নেই। সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও কার্যকর বিরোধী দলের অভাবের কারণে মূলত সংসদ প্রত্যাশিত মাত্রায় ভূমিকা রাখতে পারেনি।
আজ রোববার (১ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সংসদের কার্যকর ভূমিকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এ জন্য অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। কারণ, এখন বাস্তব বিরোধী দলবিহীন সংসদ। বিরোধী দল পরিচয়ধারী যে দলটি এখন আছে, তারা আগের তুলনায় কিছুটা সক্রিয় ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা সার্বিকভাবে আত্মপরিচয়ের সংকটে ছিল। ফলে বিরোধী দলের প্রত্যাশিত ভূমিকা দেখা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির গবেষক রাবেয়া আক্তার ও মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান সাখিদার একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে চলতি সংসদের প্রথম থেকে ২২তম অধিবেশনের কার্যক্রম ও সংসদীয় কমিটির কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের মোট সদস্য ৩৫০। ন্যূনতম ৬০ সদস্যের উপস্থিতিতে সংসদের কোরাম পূর্ণ হয়। কোরাম পূর্ণ না হলে সংসদের বৈঠক চালানো যায় না। গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রথম ২২টি অধিবেশনে কোরাম–সংকটে কেটেছে ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট, যা সংসদের কাজে মোট ব্যয় হওয়া সময়ের সাড়ে ছয় শতাংশ। অধিবেশন শুরুর তুলনায় বিরতি-পরবর্তী সময়ে কোরাম–সংকট বেশি দেখা গেছে। কোরাম–সংকটের কারণে ৮৪ শতাংশ কার্যদিবসে অধিবেশন দেরিতে শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গড়ে প্রায় পাঁচ মিনিট দেরি হয়েছে। আর বিরতির পর অধিবেশন শুরু হতে শতভাগ কার্যদিবসেই দেরি হয়েছে।
’কোরাম–সংকটে ব্যয় হওয়া সময়ে মিনিটপ্রতি ব্যয় প্রায় দুই লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ টাকা’ দাবি করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে কোরাম–সংকট ছিল ১৮ মিনিট। অবশ্য অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদের তুলনায় চলতি সংসদে কোরাম সংকট কমেছে। দশম সংসদে গড়ে ২৮ মিনিট কোরাম–সংকট ছিল। নবম সংসদে যা ছিল গড়ে ৩২ মিনিট।
টিআইবির প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, চলতি সংসদে আইন প্রণয়নের কাজে ব্যয় হয়েছে ১৭ শতাংশ সময়। একটি বিল পাসে গড়ে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট। এ দুটি ক্ষেত্রেও গত তিনটি সংসদের তুলনায় উন্নতি হয়েছে। গত দশম সংসদে আইন প্রণয়নে ব্যয় হয়েছিল ১২ শতাংশ সময়। আর প্রতিটি বিল পাসে গড়ে সময় লেগেছিল ৩১ মিনিট।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জনপ্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ সময়। রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও এর ওপর আলোচনায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ সময়। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বড় সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রশংসা এবং সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে। টিআইবির দাবি, ১৯ দশমিক চার শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে।
প্রতিবেদনে বলা আরও হয়েছে, জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী সংসদীয় কমিটিগুলোর প্রতি মাসে অন্তত একটি করে বৈঠক করার কথা, কিন্তু কোনো কমিটিই এ নিয়ম মানেনি।