বিচারপতি এমদাদুল হকের বেঞ্চে ৯৫ মামলায় আদেশ, রাষ্ট্রপক্ষের সহযোগিতা
‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ বলে মন্তব্য করা হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদের বেঞ্চ আজ ৯৫টি মামলা পরিচালনা করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও বিচারকার্যক্রমে অংশ নিয়ে সহযোগিতা করেন। আজ বুধবার (১১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত একটানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
আজ সকালে সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স-ভবনের ১১ নং কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীরা ভিড় করেছেন। বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদ যথারীতি সকালে সাড়ে দশটায় আদালতের এজলাসে ওঠেন। তার আগে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরা উপস্থিত হন। এ সময় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন। এভাবেই শুরু হয় স্বাভাবিক আদালতের বিচারকার্যক্রম।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে কার্যতালিকায় গিয়ে দেখা যায়, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদের বেঞ্চে আজ মোট ১৫৭টি মামলা কার্যতালিকায় ছিল। এরমধ্যে ৯৫টি মামলায় আদেশ হয়েছে। কিছু মামলা আপিল আবেদন গ্রহণ করে জামিন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার একটি মামলার জামিন শুনানিকালে মাননীয় বিচারপতি একটি মন্তব্য করেন। আমি জামিনের বিরোধিতা করতে গেলে তিনি আমাকে থামিয়ে দেন। এ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া হয়। তবে আজ আদালতে স্বাভাবিক বিচারকার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। বিচারক সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। আমরা এতে সহযোগিতা করেছি। তালিকায় থাকা মামলা শেষ করে তিনি এজলাস থেকে নেমেছেন।’
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদ যে মন্তব্য করেছেন, তার বিরুদ্ধে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ করেছি। কী ব্যবস্থা নেবেন সেটি প্রধান বিচারপতি মহোদয় জানেন, আমরা বলতে পারব না। তবে আজ বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদ স্বাভাবিক বিচারকার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। আজ আমাদের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরাও উপস্থিত থেকে তাদের স্বাভাবিক মামলা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।’
গতকাল মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে জামিনের শুনানিকালে এক পর্যায়ে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদ রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিমকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদ বলেন, ‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ দায়ের করা হবে।’
এক পর্যায়ে বিকেলে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদকে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের খাস কামরায় তলব করা হয়। বিকেলে খাস কামরায় ওই বিচারপতি গেলে তার সঙ্গে কথা বলেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতিরা। এ সময় তারা এমদাদুল হক আজাদকে কথা বলার সময় আরও যত্নশীল হতে বলেন।
এর আগে ‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ বলা বিচারপতি এমদাদুল হক আজাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশের কথা জানিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন। অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন বলেছেন, হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদের মন্তব্য অসাংবিধানিক ও অসৌজন্যমূলক। হাইকোর্টের বিচারপতি এমদাদুল হক আজাদের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন রেখে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিচার বিভাগ নিয়ে বহু চক্রান্ত রয়েছে। উনি (হাইকোর্টের বিচারক) কাকে লাভবান করতে এমন মন্তব্য করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছি।’
গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চে আদিলুর-এলানের পক্ষে জামিন শুনানি হয়। জামিন শুনানির শুরুতে ডায়াসের সামনে দাঁড়ান আসামি পক্ষের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম দাঁড়িয়ে যান। বলেন, ‘আমাদেরও বক্তব্য আছে।’ জবাবে বিচারক বলেন, ‘আসামিদের আইনজীবীকে আগে বলতে দিন। আপনি লাফ দিয়ে উঠছেন কেন?’
এরপর আসামিদের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ এ সময় আবারও জামিনের বিরোধিতা করে ওঠেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম। তখন আদালত উষ্মা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘তাহলে তাদের (আদিলুর-এলান) দুই বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দণ্ড দিতে পারলেন না।’ একপর্যায়ে উচ্চ আদালত বলেন, ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’