নওগাঁ থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ
মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে নওগাঁয় বাস-অটোরিকশা শ্রমিক-মালিকদের দ্বন্দ্বের জেরে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছে বাস মালিক-শ্রমিক যৌথ পরিষদ। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে নওগাঁ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-রাজশাহীসহ আন্তজেলা এবং জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
শহরের বালডাঙ্গা বাস টার্মিনালে গিয়ে কথা হয় রাজশাহীগামী ফয়সাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না ধর্মঘট চলছে। বাসস্ট্যান্ডে এসে শুনি বাস চলাচল বন্ধ। রাজশাহী খুব জরুরি কাজ আছে, না গেলেই না। বাস বন্ধ থাকায় এখন কীভাবে পৌঁছাব, সেই চিন্তা করছি।’
দোকানের মালামাল নিয়ে আবুল হাসান যাবেন জেলার সাপাহারে। তিনি বলেন, ‘সকালে এসে দেখি বাস বন্ধ। দুই দিন পরপর ধর্মঘট। যার যখন খুশি নিজ স্বার্থ আদায়ে আমাদের জিম্মি করে।’
বাস ও অটোরিকশা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে নওগাঁর মান্দায় ফেরিঘাট এলাকায় মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চালাতে বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার পর সোমবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাস স্টান্ডে সিএনজির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া, বাস মালিক গ্রুপের লাঠিয়াল বাহিনী রাস্তা থেকে প্রত্যাহার এবং সিএনজিচালককে মারধরের প্রতিবাদে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকরা সড়ক অবরোধ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ মোতায়েন করা হয় এলাকায়। ওই ঘটনার জেরে বাস শ্রমিকদের মারধরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সাধারণ বাস মালিক-শ্রমিকরা।
নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি আইন অনুযায়ী মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ। প্রশাসন, বাস মালিক ও মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও অটোরিকশা চালকেরা নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে জোর করে গাড়ি চালিয়ে আসছে। এ নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষের পর প্রশাসনের মধ্যস্ততায় দুই পক্ষের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল করবে না। কিন্তু, সিএনজি অটোরিকশা চালকেরা এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে চলছে। গত সোমবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিএনজি চালানোয় বাস শ্রমিকেরা বাধা দেয়। পরে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে মান্দার ফেরিঘাট এলাকায় সিএনজি শ্রমিকেরা বাস শ্রমিকদের মারধর করেন। ওই ঘটনার জেরে সোমবার সন্ধ্যায় নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে আরেক দফা উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য শান্ত নামে এক শ্রমিক আহত হয়েছেন। এই ঘটনার বিচার দাবিতে বাসের চালক ও সহকারীরা আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।’
নওগাঁ সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশিক হোসেন বলেন, ‘বাচ্চু সরদার নামে আমাদের একজন সিএনজিচালককে সোমবার বিকেল ৩টার দিকে মান্দার ফেরিঘাটে বাস মালিক সমিতির লাঠিয়াল বাহিনীর লোকজন মারধর করেছে। বাস শ্রমিকেরা তিনটি সিএনজিও ভাঙচুর করেছে। এ রকম ঘটনা প্রতিনিয়িতই ঘটছে। বাসের লোকজন প্রতিদিনই আমাদের রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশা চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে, যা অন্যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা আশানুরূপ সহযোগিতা পাচ্ছি না। এসব কারণে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। এর সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা সিএনজি চালব না এবং বাসও চলাচল করতে দেব না।’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, ‘নওগাঁয় বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। দ্বন্দ্বের জেরে প্রায়ই ধর্মঘটের ডাক দেন বাস মালিক-শ্রমিকেরা। সোমবার বাস ও সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনার জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকে উভয়পক্ষ যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’