হেলমেট বাহিনীর হামলায় আতঙ্কিত নাটোর
বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর অব্যাহত হামলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নাটোর জেলাজুড়ে। প্রত্যেকটি হামলার পর সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বললেও এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের সম্পর্কে কোনো তথ্য-উপাত্ত জানতে পারেনি পুলিশ।
অব্যাহত এই হামলার ভয়ে এই চক্রের ব্যাপারে কেউ প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করারও সাহস করছে না। কখনও হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে কখনও মাইক্রোবাসে গিয়ে তুলে নিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে আবার হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হচ্ছে অসহায় এ সব মানুষকে। এ পর্যন্ত হামলার শিকার সবাই বিরোধী রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মী।
গত ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ধারাবাহিক হামলার সর্বশেষ শিকার হন গত ১২ নভেম্বর রোববার নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি সজিব হোসেন। গত ১৬ অক্টোবর এই হামলা শুরু হয় এই উপজেলা থেকেই। সর্বাধিক হামলার ঘটনাও এই উপজেলায়ই ঘটে।
গত ১৬ অক্টোবর রাতে নলডাঙ্গা উপজেলার বাসিলা গ্রামে স্থানীয় সড়কে হেলমেটধারীদের হামলার শিকার হন জামায়াতের শুরা সদস্য নাছির উদ্দিন সরকার (৬০) ও জামায়াতকর্মী আবু নওশাদ (৪২)। তাঁদের পিটিয়ে গুরুতর জখম করে হেলমেটধারী দুর্বৃত্তরা। এরপর ২৫ অক্টোবর রাতে একই উপজেলার নসরৎপুরে হামলার শিকার হন আরেক জামায়াতকর্মী আলাউদ্দিন (৬০)। তাঁকেও একই কায়দায় জখম করা হয়। পরের দিন রাতে এই উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও পল্লী চিকিৎসক ফজলার রহমান ওরফে ফজল ডাক্তারকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে ফেলে রেখে যায় হেলমেটধারী মোটরসাইকেল আরোহীরা। নিজ চেম্বার থেকে মোরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে নলডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তাঁর গতি রোধ করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায় হেলমেটধারীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
৩০ আক্টোবর রাতে উপজেলার খাজুরা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মোশাররফ হোসেনকে বাড়ি থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায় অজ্ঞাত পরিচয় এই বাহিনীর সদস্যরা।
গত ৩ নভেম্বর রাতে লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকারকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে কুপিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে যায় এই বাহিনীর সদস্যরা। বিলমাড়িয়া বাজারে তাঁর মোবাইল ফোনের দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণ করা হয় তাঁকে। আর ১০ নভেম্বরের ঘটনাটি ঘটে সিংড়া উপজেলায়। এদিন দুপুরে জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে কুসুম্বি কালিগঞ্জ এলাকা থেকে সিংড়া উপজেলার ছাতারদীঘি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুর রাজ্জাককে (৬৫) মাইক্রোবাসে তুলে নেয় এই বাহিনী। এরপর তাঁর দুই পা ভেঙে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে চলে যায় তারা। তাঁকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামলার শিকার জামায়াতের স্থানীয় এসব নেতা প্রায় সবাই প্রবীণ। এ পর্যন্ত অজ্ঞাত পরিচয় বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছেন জামায়াতের ছয়জন এবং যুবদলের স্থানীয় দুই নেতা। হামলার সর্বোচ্চ ঘটনা ঘটেছে নলডাঙ্গায় উপজেলায়।
এ ব্যাপারে নলডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আকবর হোসেন জানান. এসব ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। আর লালপুরে যুবদলনেতাকে মাইকোবাসে তুলে নিয়ে কুপিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি বলে জানান এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জ্বল হোসেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।