গাজীপুরের কালীগঞ্জে মাঘমেলা শুরু
বিদায় নিয়েছে পৌষ মাস। আজ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছ মাঘ মাস। এ দিনের জন্য অপেক্ষায় ছিল গাজীপুরের কালীগঞ্জবাসী। উপজেলার শীতলক্ষ্যার উত্তর তীরের বকুলতলায় সাজসাজ রব। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসী জড়ো হতে থাকে দেড়শ বছরের পুরোনো গ্রামীণ মাঘ মেলায়। আজ থেকে শুরু হওয়া মাঘমেলায় বাহারি সব খাবার আর তৈজসপত্রের দারুণ সমারোহ থাকছে।
শিশু-কিশোরদের হই-হুল্লোড়ের পাশাপাশি সব বয়সী নারী-পুরুষের মিলনমেলায় যেন পরিণত হয় এ মাঘমেলা। শুরুতে এ মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে তা সব ধর্মের মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন পুরো এক মাসের জন্য। এ সময় উপজেলার দড়িসোম এলাকার শীতলক্ষ্যা তীরের বকুলতলা শতভাগ বাঙালিয়ানায় নিজেকে সাজায়। নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। মৃৎশিল্পের পাশাপাশি বস্ত্রশিল্পেরও দেখা মিলে এ মেলায়। মাটির তৈরি ফলের রঙিন ব্যাংক, সাহেব-মেম বা বউ পুতুল, মাটির গরু, ছাগল, হাতি, বাঘ, সিংহ, ঘোড়াসহ নানা তৈজসপত্র ওঠে এ মেলায়।
মেলায় ঘুরতে আসা মো. মুক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে এ মেলায় আসতাম। মেলায় বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন আর খেলনা কেনার বায়না ধরতাম। এখন আমার ছেলেকে নিয়ে আসি। ভালো লাগে যখন সে আমার কাছে বায়না ধরে, ওসব জিনিস কিনে দেওয়ার। মনে পড়ে ছোটবেলার সেই দিনগুলোর কথা।’
অপর দর্শনার্থী মো. মোজাফ্ফর হোসেন জানান, কাঠের আসবাব কিনতে মেলায় এসেছেন। সাধারণ ফার্নিচারের দোকান থেকে পণ্য কিনতে বেশি টাকা গুনতে হয়। মেলায় তুলনামুলক দাম কম।
ব্যবসায়ী মো. ফয়জুর মেলায় এসেছেন কুমিল্লা থেকে। তিনি সারা দেশে যেখানে মেলা হয় সেখানেই ছুটে বেড়ান। নানা রকমের আসবাব বিক্রি করেন। এখানে এসেছেন এক মাসের জন্য। গত বছর মোটামুটি কেনাবেচা ভালো ছিল। তিনি আশা করছেন এ বছরও ভালো হবে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা অপর ব্যবসায়ী মো. রোমান হোসেন বলেন, ‘আমার পৈতৃক পুরুষের ব্যবসা তিলা কদমা বিক্রি। বংশপরম্পরায় এ কাজ এখন আমি নিজের হাতেই করছি। যেখানেই মেলার আয়োজন হয়, সেখানেই ছুটে যাই। মাঘমেলায় আগামী এক মাস কালীগঞ্জেই অবস্থান করব। এরপর অন্যত্র চলে যাব।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় ব্যবসা করি। আমার বাপ-দাদাদের দেখতাম মেলাতে এসে দোকানদারি করতে। আগের মতো সেই আমেজ এখন আর দেখি না। সবকিছুতেই কৃত্রিমত্তা লক্ষ্য করি। আসলে গ্রামীণ সেই পরিবেশের পাশাপাশি সহজ-সরল সেই মানুষও এখন আর নেই। তবুও এটুকুতে স্বস্তি পাই, এ মাঘমেলা এখনও বেঁচে আছে।’
মেলার আয়োজক ওয়াহিদুল ইসলাম সুমন জানান, স্থানীয় ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে, মেলায় স্বল্প খরচে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের স্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে মেলায় অংশগ্রহণের জন্য।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহতাব উদ্দিন জানান, সব ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে, আইনের পরিপন্থী জুয়া বা অসামাজিক কার্যকলাপ ঠেকাতে মেলায় সাদাপোশাকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।