বাবাকে হারানোর একমাস পরই ভয় হচ্ছিল মাকে নিয়ে, এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক
‘বাবাকে হারানোর একমাস পরই আমাদের জাহাজটি দস্যুদের কবলে পড়ে। বাবাকে হারানোর শোক না কাটিয়ে উঠতেই আমার এভাবে বিপদে পড়া। এটি কীভাবে মা সহ্য করছেন তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম।’ অশ্রুশিক্ত চোখে কথাগুলো বলছিলেন মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান।
আজ বুধবার (১৫ মে) এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে এ কথাগুলো বলেন আইয়ুব খান।
আইয়ুব লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিনন বেপারী বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে।
দস্যুদের আক্রমণের পর থেকে জাহাজে কী কী হয়েছিল জানতে চাইলে আইয়ুব বলেন, ‘আক্রমণের পর জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করতে বলে দস্যুরা। এরপর তারা আমাদেরকে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যায়। প্রায় আড়াই দিন লেগেছে সোমালিয়ায় যেতে। প্রথম কয়েকদিন আমাদের সবাইকে একটি রুমে আটকে রাখে। সবাইকে একই বাথরুম ব্যবহার করতে হয়েছে। দস্যুরাও আমাদের বাথরুম ব্যবহার করেছে। প্রথম কয়েকদিন তারা আমাদের খাবার খেয়েছেন। সোমালিয়ায় পৌঁছানোর পর তারা নিজেদের খাবার সংগ্রহ করে।’
ঈদের দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এমভি আবদুল্লাহর ইঞ্জিন ক্যাডেট বলেন, ‘ঈদের দিন নামাজ পড়তে পারলেও আনন্দ ছিল না। কারণ বন্দিদশা থেকে কবে মুক্ত হবো তা নিয়েই দিন গুণতে হয়েছে আমাদের। একজন দোভাষীর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি- জলদস্যুরা জাহাজ মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে। মুক্তিপণ নিয়ে জাহাজ মালিকদের সঙ্গে দস্যুদের সমঝোতা হয়েছে। মুক্তিপণ দিলেই নাবিকরা মুক্তি পাবে।’
‘ঈদুল ফিতরের ২-৩ দিন পর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মুক্তিপণের ডলারের ব্যাগ জাহাজে ফেলা হয়। এরপর টাকা নিয়ে ভাগ হয়ে যায় জলদস্যুরা। তিনভাগে জাহাজ ছাড়ে দস্যুবাহিনীরা।’
গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বন্দরে এসে আত্মীয়- স্বজনদের দেখে মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। যে ঈদ আমরা আতঙ্কে কাটিয়েছি, পরিবার-স্বজনদের পেয়ে সেই ঈদ আনন্দ আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে, বলেন আইয়ুব।
আইয়ুবের বড় ভাই ওমর ফারুক রাজু বলেন, ‘দস্যুদের আক্রমণের প্রায় এক মাস আগেই বাবা মারা যান। সেই শোক না কাটতেই আইয়ুবসহ ২৩ নাবিক সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এতে পুরো পরিবারের ওপর অমাবশ্যার অন্ধকার নেমে আসে। তার ফিরে আসা সবার জন্য আনন্দের।’
আইয়ুবের মা হোমায়রা বেগম বলেন, আইয়ুব আমার কোলে ফিরে এসেছে, এটি আল্লাহর কাছে আমার চাওয়া ছিল। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। আল্লাহ যেন আইয়ুবসহ সবাইকে ফিরিয়ে দেয়। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া সবাই সহিহ সালামতে ফিরে এসেছে।
কয়লা নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এম ভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালি দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে তারা জাহাজের ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর জাহাজের মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে। মুক্তিপণ বুঝে নেওয়ার পর গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় দিনগত রাত ৩টা ৮ মিনিটের দিকে এম ভি আবদুল্লাহ থেকে দস্যুরা নেমে যায়।