প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের ধর্ষণ করতেন জুজুৎসুর রফিকুল : র্যাব
বাংলাদেশ জুজুৎসু অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে নিউটন নারী প্রশিক্ষণার্থীদের ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া এবং বিদেশ ভ্রমণের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। গতকাল শনিবার (১৮ মে) তাকেসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানায় এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গতকাল শনিবার (১৮ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, জুজুৎসু অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তার প্রস্তাবে কেউ রাজি না হলে নানাভাবে অপদস্থ করতেন। ভয়ে কেউ বাইরে বিষয়গুলো বলত না। এমনকি অনুশীলনের আগে মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনের কক্ষে ঢুকে তাদের ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ ও নগ্ন ছবি তুলে রাখতেন। পরে ধারণকৃত নগ্ন ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়-ভীতি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল ও বারবার ধর্ষণ করতেন রফিকুল।
এর আগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এক নারী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। ওই মামলায় রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার অভিযোগ করা হয়, জুজুৎসুর সেই ক্রীড়াবিদকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রফিকুল। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বারবার তাকে ধর্ষণ করা হয়।
আরাফাত ইসলাম বলেন, যেখানে অভিভাবক হিসেবে এই কোমলমতি মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল রফিকের, কিন্তু সেই ব্যক্তি কোমলমতি মেয়েদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার হীন চরিত্র চরিতার্থ করতেন। রফিকুল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের মতো পদে থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া এবং বিদেশ ভ্রমণের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের মতো অপকর্ম করতেন। এ ছাড়া অ্যাসোসিয়েশনের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে গর্ভবতী হলে তাদের গর্ভপাত করানোর মতো ভয়ঙ্কর কাজও করেছেন তিনি।
র্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক বলেন, ‘সেই সাহসী নারী যদি অভিযোগ না করতেন তবে সমাজের সামনে এমন ঘৃণিত একজন ব্যক্তির মুখোশ উন্মোচন হতো না। একাধিক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। আমরা মনে করি, এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে তার হাতে যারা নির্যাতিত হয়েছেন, তারা অভিযোগ করবেন। আশা করছি, তারাও বিচার পাবেন।’
আরাফাত ইসলাম আরও বলেন, ‘তার মোবাইলে আমরা অসংখ্য ছবি পেয়েছি। তিনি যে অসংখ্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন তার ছবি ও ভিডিও তার মোবাইল থেকে পাওয়া গেছে। আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে ও সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ভেবে সেসব ছবি ও ভিডিও আপনাদের সামনে প্রকাশ করছি না। তবে তদন্তে এগুলো বেরিয়ে আসবে আমি সুনিশ্চিত।’ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
ভুক্তভোগী ওই নারী মামলার এজাহারে যা উল্লেখ করেছেন
রফিকুল ইসলাম অ্যাসোসিয়েশনের এক নারী খেলোয়াড়ের সহায়তায় অন্য নারীদের মিথ্যা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে যৌন হয়রানিসহ জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করতেন। গত দুই বছর ধরে জুজুৎসু অ্যাসোসিয়েশনে রফিকুলের অধীনে জুজুৎসু খেলার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আসছিলেন তিনি। খেলার প্রশিক্ষণের সময়ে রফিক বিভিন্ন অজুহাতে তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করতেন। পরে তার প্র্যাকটিস শেষে চেঞ্জিং রুমে পোশাক পরিবর্তন করার সময় রফিকুলের সহযোগী নারী খেলোয়াড় তাকে আটকে রাখতেন। এরপর রফিকুল ইসলামকে ডেকে এনে রুমে ঢুকিয়ে দিতেন। পরে চলত ধর্ষণ।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সহযোগী ওই নারী খেলোয়াড় রুমে প্রবেশ করে মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগীর নগ্ন ছবি ধারণ করতেন এবং কাউকে জানালে তার নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এ ঘটনার পর রফিকুল ইসলাম তার নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে রাজধানীর একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করেছেন।