ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজনের কারাদণ্ড
রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার তৎকালীন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. মনিরুল ইসলাম ও কনস্টেবল এস এম জুলফিকার আলীসহ তিন জনকে সাড়ে চারবছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার (২৭ মে) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন। বিচারক আসামিকে দণ্ডবিধির ৩৪২ ধারায় ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৩৮৮ ধারায় ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়া আরও ৪ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৪ মাসের কারাদণ্ড ভোগের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আসামিদের সবগুলো সাজা একত্রে ভোগ করতে হবে।
সাজাপ্রাপ্ত অপর আসামি হলেন, মো. নূর উদ্দীন আহমেদ। এছাড়াও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মো. নিরব হাসান সজিব নামে এক আসামির খালাসের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
নথি থেকে জানা গেছে, মামলার বাদী খন্দকার নুরুজ্জামান রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবারের সঙ্গে কাজ করতেন। ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই রাত আনুমানিক ১১.৪০ মিনিটের দিকে বাদীর মোবাইলে উবার এর মাধ্যমে মালিবাগ গুলবাগ রোড থেকে একটি কল রিসিভ করেন। রাস্তা কাটা বলে কল দেওয়া ব্যক্তি জানায় তার ছোট ভাই বাদীকে মালিবাগ মোড়ের ভেতরে স্বপ্ন নামে দোকানের সামনে থেকে পথ দেখিয়ে পিকআপ পয়েন্টে নিয়ে আসবে। সেই মোতাবেক বাদী স্বপ্ন দোকানের সামনে গেলে নিরব হাসান সজিব পথ দেখানোর কথা বলে মলিবাগ কালসির গলির শেষপ্রান্তে নিয়ে যায়।
নথিতে আরও জানা যায়, সেখানে গিয়ে পুলিশের পোশাকে আসামি মনিরুল ও জুলফিকারকে বাদী দেখতে পায়। আসামিরা বাদীর পরিচয় জিজ্ঞাস করে ও বাদীর গাড়ি তল্লাশি করে। পরে ড্রাইভার সিটের পেছনে হাত বুলিয়ে একটি লম্বা ট্যাপে মোড়ানো ৪/৫টি ইয়াবা টেবলেটের মতো জিনিস কিছু বাদীকে দেখায় এবং বাদীকে ওই পণ্যের ব্যবসায়ী বলে অভিযুক্ত করে। ওই সময় আরেক আসামি সাংবাদিক পরিচয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ও এসএম জুলফিকার বাদীকে মাদক ব্যবসায়ী বলে জানায় এবং হাতকড়া পরিয়ে আটকে ফেলে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, এক আসামি বাদীর গাড়িতে ওঠে এবং গাড়ি চালিয়ে বড় গেট লাগানো খালি এক জায়গায় নিয়ে যেতে বলে। বাদী ওখানে যাওয়ার পর এক আসামি গেট বন্ধ করে দেয় একটি একচালা টিনের ঘরে নিয়ে যায়। এরপর বাদীকে বসতে বলে, এক পর্যায়ে আসামিরা সমঝোতার করতে চাপ প্রয়োগ করে। বাবু নামে আরেক আসামির সঙ্গে কথা বলে ৬০ হাজার টাকায় সমঝোতা হয়। বাদী টাকা দিতে না চাইলে ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ধরিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয় আসামিরা। বাদী অসুস্থ ও ডাইবেটিসের রোগী বলে শেষ নাগাদ ২৫ হাজার টাকায় রফাদফা হয়।
আসামিদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে শাহজাহানপুর থানায় পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে খন্দকার নুরুজ্জামান মামলাটি দায়ের করেন।পরে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সিদ্দিক ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরের বছর ২ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলার সময়ে ১২ সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।