‘রিলাক্সে আছি’
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা চত্বর। ব্যস্ততম মোড়। সাধারণত, সার্ক ফোয়ারার চারপাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। বর্ষা, দাবদাহ কিংবা শীত, এ দৃশ্য চিরাচরিত।
কিন্তু, আজ রোববার (১৬ জুন) দেখা গেল ভিন্ন ঘটনা। সার্ক ফোয়ারা চত্বরে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি ছাতার নিচে তরিকুল নামের এক ট্রাফিক পুলিশ বেশ আরামেই বসে ছিলেন। চারিদিকে তাকাচ্ছিলেন। এ ঘটনা ঠিক বেলা ১১টার দিকের।
এমন সময় তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ঈদের ছুটির সময় দায়িত্ব পালন করতে কেমন লাগছে? জবাবে তরিকুল বলেন, ‘বছরে এমন সময় কমই আসে। গাড়ি-ঘোড়ার চাপ নেই। মানুষজন নেই। ট্রাফিক সিগন্যালও নেই। রিলাক্সে বসে আছি। তবে, সতর্ক আছি। যেন সড়কের শৃঙ্খলা ঠিক থাকে। এখানে আরও কয়েকজন আছেন ডিউটিতে। কিন্তু, রাস্তায় তেমন দাঁড়ানো লাগছে না।’
এর ঠিক দু-মিনিট পর আয়াত পরিবহনের একটি বাস এসে থামে কারওয়ান বাজার বাস স্ট্যান্ডে। বাসের ভেতরে যাত্রী ছিল কেবল সাতজন। জানতে চাইলে চালকের সহকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যা পর্যন্ত আছি রোডে। তারপর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় চলে যাব। বাসে ওঠার যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। আয়ও কম।’
একই ধরনের দৃশ্য রাজধানীর প্রায় সব মোড়ের। রাজধানীর বাংলামোটর, শাহবাগ, বিজয় স্মরণি ও ফার্মগেটে দেখা গেল সড়কে যানজট নেই। বেশি মানুষের আনাগোনা নেই। ফলে, ঈদে ছুটি না পাওয়া ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা খানিকটা আরাম-আয়েশেই দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও তাঁরা সতর্ক রয়েছেন, যেন কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।
আগামীকাল সারাদেশে পালিত হবে ঈদুল আজহা। এ কারণে ইতোমধ্যে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক রাজধানীবাসী। আজ রোববার (১৬ জুন) ঈদের আগের দিনও মানুষ ছুটছে গ্রামের উদ্দেশে। আর এরপরও ঢাকায় থাকবেন তারা, যারা স্থানীয় অথবা নানা কারণে যাদের গ্রামে যাওয়ার সুযোগ নেই।
তবে, এ ফাঁকা ঢাকার পরিবেশ নিয়ে রয়েছে চুরি-ছিনতাইয়ের শঙ্কা। সাধারণত ঈদের সময় এলেই রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই বেড়ে যায়। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার কথা বলা হচ্ছে। র্যাব-পুলিশ বলছে, যেহেতু শহরের অনেক বাসিন্দা ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন; সেহেতু রাজধানীর নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের।
গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, প্রতিবছর রাজধানী থেকে এক কোটি মানুষ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে যায়। তাদের ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে পুলিশ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়েছে। এবারও ঈদ উপলক্ষে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের যে নিজস্ব কার্যক্রম রয়েছে চেকপোস্ট, টহল; এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভবনের নিরাপত্তায় থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের। তারা সমন্বয় করে আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন যাতে কোনো সমস্যা না হয়। বাসা-বাড়ি, দোকান, অফিস খালি রেখে সংশ্লিষ্টরা ঈদের ছুটিতে যাচ্ছেন। সুতরাং, সেগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের।