বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে আরও ৫০ গ্রাম প্লাবিত
সুনামগঞ্জে অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তিন উপজেলার অন্তত আরও ৫০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া, রসরাই লক্ষ্মীপুর গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত শতাধিক বসত ঘর স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে। বড় বড় গাছপালা উপড়ে পড়েছে, অর্ধশত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, পোল্ট্রি ফার্মের মোরগ ভেসে কয়েক লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বসতঘর হারিয়ে কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এবং কিছু মানুষ সড়কে আশ্রয় নিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আগামীকাল সোমবার (১৬ জুন) কোরবানির ঈদ। ঈদের আনন্দ তো দূরের কথা, মাথা গোঁজারই ঠাঁই নেই তাদের। তাই চরম বিপাকে এই এলাকার মানুষ।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের গৃহিণী রঙমালা (৩০) জানান, শুক্রবার সকাল থেকে খাসিয়ামারা নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢল গ্রামে ঢুকে যায়। মুহূর্তেই পানি ঢুকে বসতঘরের সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কোন মতে সন্তান নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছেন। গত দুদিন ধরে বেড়িবাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন।
একই গ্রামের আরেক গৃহিণী আমিরজান (৫০) জানান, আগামীকাল ঈদ। ঈদের খুশি তো পরের কথা, জান নিয়ে টিকে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপাতত জান নিয়ে বেঁচে থাকাই বড় ব্যাপার হয়ে গেছে।
নোয়াপাড়া গ্রামের রূপচাঁন মিয়া (৩৫) জানান, এ বছর ১০টি পুকুরে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মাছের চাষ করেছিলেন। এক মুহূর্তেই ঢলের পানিতে সব মাছ ভেসে গেছে।
এদিকে তিনদিন ধরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের প্রভাবে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। প্রতিদিন নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।
উজানের পানিতে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর, বোগলা, সুরমা, নরসিংপুর ও দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়ন, ছাতকের নোয়ারাই, ছৈলা আফজালাবাদ, উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা, জাহাঙ্গীরনগর ও লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিন উপজেলার আঞ্চলিক সড়কসহ বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সুরমা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের ছাতকে ৩৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৫০ মিলিমিটার ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৪৪১ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকলে স্বল্পমেয়াদী বন্যার কথা জানিয়েছের জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, পানি বাড়লেও আতঙ্কের কিছু নেই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। কোন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।