সরকারের প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে না : মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এই সরকারের প্রতিহিংসায় দীর্ঘদিন যাবত কারাবন্দি রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রেখে হত্যা করার জন্য সুচিকিৎসা ব্যবস্থা করছেন না।’
আজ রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মির্জা ফখরুল। তিনি খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতার জন্য নেতাকর্মীদের কাছে দোয়া চান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) বাসায় আসার পর বলা হয়েছে, বাসায় সবাই যেতে পারবে না। তাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু মেডিকেল রিপোর্ট বারবার বলেছে, ম্যাডামের যে অসুখ এর চিকিৎসা এদেশে করা সম্ভব নয়। তার চিকিৎসার জন্য উন্নত দেশ, উন্নত মানের চিকিৎসা প্রয়োজন। আমরা দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার বলার পরও ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রেখে হত্যা করার জন্য সুচিকিৎসা ব্যবস্থা করছেন না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনোই ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেনি। জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তারা বারবার ক্ষমতা দখল করেছে। মানুষের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার, মানুষের ন্যূনতম স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। তারা দেশটাকে বিকিয়ে দিয়েছে।’
সাবেক পুলিশপ্রধান, সেনাবাহিনীর প্রধান ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েকদিন আগে পুলিশ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে সতর্ক হতে হবে। তারা গণমাধ্যমকে হুমকি দিচ্ছে, যাতে করে জাতি সত্য তথ্য জানতে না পারে। এভাবে দেশের প্রত্যেকটি কাঠামোই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভারত তাদের অনেকগুলো চুক্তি করিয়ে নিয়েছে, কিন্তু আমাদের কোনোটাই হয়নি। আমরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। প্রত্যেকটি নদীর হিস্যা আমাদের অধিকার। মিয়ানমার থেকে গুলি আসে, অথচ সরকার কিছুই বলে না। এ সরকার জগদ্দল পাথরের মতো বুকে চেপে বসে আছে।’
বেগম খালেদা জিয়া ভীষণ অসুস্থ জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মির্জা ফখরুল। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দোয়া করুন। গণতন্ত্রের প্রতীক, যিনি স্বৈরাচারের কাছ থেকে আমাদেরকে গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন, কেয়ারটেকার গর্ভমেন্টকে সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন, এদেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছিলেন, এদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধি করার জন্য কাজ করেছিলেন, সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিনা চিকিৎসায় আজ বন্দি অবস্থায় মৃত্যু শয্যায়।’
‘আসুন দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে আমাদের মাঝে আবার ফিরিয়ে দেন। আমরা যেন তার নেতৃত্বে আবার আগের মতো জেগে উঠতে পারি। এই ভয়াবহ দানব সরকার রাষ্ট্রের, মানুষের, জাতির সব কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে, তাকে যেন পরাজিত করতে পারি। আমরা সেই দোয়াই যেন আল্লাহর কাছে করি। আল্লাহ যেন আমাদের সেই তৌফিক দেন, শক্তি দেন’, যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
দোয়া মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।