প্রত্যেক নাগরিককে ইউনিক হেলথ আইডি দেওয়া হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিককে ইউনিক হেলথ আইডি প্রদানের জন্য হেলথ প্রোফাইল তৈরির উদ্দেশ্যে শেয়ার্ড হেলথ রেকর্ড প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকার দলীয় মাহমুদ হাসান রিপনের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে ইউনিক হেলথ আইডি প্রদানের কাজ শুরু হয়েছে। ওই পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের ফলাফলের ভিত্তিতে শিগগিরই এই কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। পরীক্ষামূলক ইউনিক হেলথ আইডি প্রদান কার্যক্রমের আওতায় এই পর্যন্ত ১৪ লাখ ৩ হাজার ৮৮৯টি আইডি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের প্রত্যেক নাগরিককে ইউনিক হেলথ আইডি দেওয়া হবে।’
একই প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার এইচআইএস অ্যান্ড ই-হেলথ অপারেশন প্লানের আওতায় বর্তমানে ৬৭ হাসপাতালে অটোমেশন চালু করা হয়েছে। সকল হাসপাতালে অটোমেশন চালু করার লক্ষ্যে ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে।
সরকার দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখা কর্তৃক অনলাইন প্লাটফর্মে ডেঙ্গু রিপোর্টিং তৈরি হয়েছে। যার মাধ্যমে ল্যাবে পরীক্ষাকৃত ডেঙ্গু রোগীর পরীক্ষার ফলাফল সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে একই রোগীর একাধিক রিপোর্ট রোধ করা সম্ভব হবে। সারাদেশে সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ও পরিসংখ্যানবিদ/ডাটা এন্ট্রি অপারেটর/কম্পিউটার অপারেটরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের সকল সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে ‘ডেঙ্গু ফোকাল পারসন’ নির্ধারণ করা হয়েছে, যাদের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সারা দেশের ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ডেঙ্গু টেস্ট কিট, আইভি ফ্লুইড (স্যালাইন) এবং অন্যান্য লজিস্টিক এর স্টক এবং চাহিদা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে দেশের বিভিন্ন জেলার ৫৪ হাসপাতালে আইভি ফ্লুইড (স্যালাইন) ২লাখ ১৫ হাজার ৭৫২ লিটার, স্যালাইন সেট ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৫৬৯টি, মশারি ২৬ হাজার ১৩৫টি ও ডেঙ্গু টেস্ট কিট ১ লাখ ১ হাজার ১৫৯টি মজুদ রাখা হয়েছিল। এছাড়া গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত ডেঙ্গু টেস্ট কিট (এনএস-১) ৮ লাখ ৫১ হাজার ৫১৪টি, Combo IgG & IgM Test kit - ১৬০০টি এবং Dengue RNA Diagnostic Kit ১১০০টি সিএমএসডিতে মজুদ রাখা হয়েছিল। এছাড়া WHO- এর সহায়তায় ৫৫,০০০ ব্যাগ Ringer’s Lactate স্যালাইন সিএমএসডিতে মজুদ ছিল। হুয়ের মাধ্যমে আরও ২০ হাজার ব্যাগ ৫০০ মি.লি. নরমাল স্যালাইন পাওয়া গেছে। যা সিএমএসডিতে মজুদ আছে। ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ২ লাখ কিট মজুদ আছে। যার মধ্যে এক লাখ ১১ হাজার কিট ৬৪ জেলায় সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি ৮৮ হাজার কিট মজুদ আছে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের ৭২ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৬ হাজার ৫৫৭টি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত ৫টি মেডিকেল কলেজের ২৬০টি আসনসহ। আইন ও নীতিমালা অনুসারে মানসম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা না করায় ৪টি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম স্থগিত এবং দুটি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল রয়েছে। যাতে আসন ৫ হাজার ৩৮০টি। আর সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ১২৫টি।
সরকার দলীয় এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা; ইউনিসেফ; ইউএনএইচসিআর; গ্লোবাল ফান্ড; ভাইটাল স্ট্রাটাজিজ; সেভ দ্য চিলড্রেন; এনএফএইচ; জাইকাসহ আরো বেশ কিছু বিদেশি সংস্থা কাজ করছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে এসকল প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আর্থিক সহায়তা প্রদান করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
স্বতন্ত্র এমপি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বিদেশি বিনিয়োগকে সরকার সবসময় উৎসাহিত করে। দেশের হাসপাতালগুলোর সেবার মান বাড়াতে চীনা বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দেশে ১৪ হাজার ৩২০ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, সারাদেশে মোট ১৪ হাজার ৮৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। তার মধ্যে বর্তমানে সারাদেশে মোট ১৪ হাজার ৩২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। এছাড়া ৬৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক হতে গ্রামীণ জনগণকে মূলত স্বাস্থ্যশিক্ষা, স্বাস্থ্য উন্নয়ন, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগ শনাক্তকরণ, সীমিত নিরাময়মূলক সেবাসহ জরুরি ও জটিল রোগীদের যথাযথ ব্যবস্থাপনার জন্য উচ্চতর পর্যায়ে রেফার সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও অসংক্রামক রোগসমূহ প্রাথমিকভাবে নিরূপণ এবং উচ্চতর পর্যায়ে রেফার যেমন: উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আর্সেনিকোসিস, অটিজম ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম আরও জোরদারকরণ এবং একটি কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।