কমেছে আয়, গ্রামে ফিরছেন খেটে খাওয়া মানুষ
রিকশাচালক, নাম রফিকুল ইসলাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মালবাহী ট্রাকের অপেক্ষায় বসে ছিলেন তিনি। যাবেন দিনাজপুর। তিনি দাবি করেন, গত পাঁচ দিন তিনি রিকশা চালাতে পারছেন না। আয় কমে এসেছে, এদিকে খরচ বেড়েছে। জমানো অর্থ খরচ হতে হতে এখন টিকে থাকা কঠিন। এজন্য গ্রামের বাড়ি ফিরতে চান তিনি। শুধু রফিকুল নন, কুলির কাজ করা কাওসার, ভ্যানচালক সাঈদ, ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা রুহুল আমিনসহ খেটে খাওয়া অনেকে জানান একই কথা।
আজ মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় রফিকুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গত রোববার একবার রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলাম। ৩০ টাকা ভাড়া মেরেছি। তারপর আর যাত্রী পাইনি। আবার কারফিউয়ের মধ্যে ভয়ে ভয়ে রিকশা বের করেছিলাম। পাঁচ দিন শুধু বসে বসে এভাবেই খাচ্ছি। এতে করে অল্প যে কয়টি টাকা জমানো ছিল, তা প্রায় শেষের পথে। তাই বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষা করছি।
শুধু রফিকুল ইসলাম নয়, তাঁর মতো আরও অন্তত ৩০ জন রিকশাচালককে দেখা গেল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। যারা দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতে চান মালবাহী ট্রাকে চড়ে। তাঁদের মধ্যে সাইফুল যাবেন গায়বান্ধায়। তিনি তিন দিন পর গতকাল সোমবার তিন ঘণ্টা রিকশা চালিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ‘আমি তিন ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে ৪০ টাকা কামাই করেছি। আর চার দিন পুরোপুরি রিকশা বন্ধ করে বসে বসে খাচ্ছি। তাই গায়বান্ধায় যাচ্ছি। পরিস্থিতি ভালো হলে আবার আসব।’
সারাদেশ থেকে কাঁচামালের ট্রাক আসে কারওয়ান বাজারে। কাঁচামালের ট্রাক এলে ভ্যান নিয়ে ছোটেন চালকেরা। তবে, সেই সংখ্যা কমে যাওয়ায় কাজ নেই সাঈদের। তিনি জানান, পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত গ্রামেই থাকতে চান। রাতে তার এলাকার কোনো ট্রাক কাঁচামাল নিয়ে এলে ফেরার সময় ওই ট্রাকে করে গ্রামে যাবেন তিনি।
গতকাল সোমবারও সন্ধায় অন্তত ২০ জনকে কারওয়ান বাজারের মূল সড়কে বসে থাকতে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে মো. সবুর একজন। তিনি যশোর যাবেন। ৬০ বছর বয়সী এক রিকশাচালক বলেন, চার দিন একবারও রিকশা বের করিনি ভয়ে। দেশের যে অবস্থা তাতে ভয় লাগে। গ্রামে ছেলেমেয়ে আছে। তাদের কাছে ফিরে যাই আগে। এখানে এখন শুধু খরচ হচ্ছে, আয় হচ্ছে না।
কারওয়ান বাজারের বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় রিকশাচালক মামুনের সঙ্গে। তাঁর কাছে প্রশ্ন করা হয়, সারা দিনে তার কত টাকা আয় হয়েছে। জবাবে মামুন বলেন, ‘আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালিয়েছি। ৩০০ টাকা আয় করেছি। অথচ, সারাদিন আগে গাড়ি চালালে কম করে হলেও ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করা যেত।’