ধ্বংসযজ্ঞ দেখে কূটনীতিকরা স্তম্ভিত : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে কূটনীতিকরা স্তম্ভিত হয়ে গেছেন। তারা এই তাণ্ডবের তীব্র নিন্দা জানাতে ‘শেইম, শেইম’ উচ্চারণ করেছেন। তারা বলেছেন, এটি তোমাদের (বাংলাদেশের) অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি।
গতকাল বুধবার (২৪ জুলাই) বিকেলে বিদেশি মিশনপ্রধান ও কূটনীতিকদেরকে নিয়ে সম্প্রতি দুষ্কৃতকারীদের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডবলীলায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত ও পুড়ে যাওয়া ঢাকার চারটি স্থাপনা পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান।
মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে আমরা বাংলাদেশে কর্মরত কূটনীতিকদের ঢাকা শহরের সেতু ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন ও বিটিভি ভবনের মতো জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল তাদের আরও কয়েক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, বিশেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ডেটা সেন্টার। কিন্তু রাস্তায় প্রচুর যানজট ও বৃষ্টির কারণে অনেক বেশি সময় লেগেছে। তবে তারা মিরপুরের মেট্রোরেলের ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছেন, সেখানে কীভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এমনকি ফুটওভার ব্রিজও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেতু ভবনে যেভাবে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, সেখানে ১২তলা পর্যন্ত আগুন দিয়েছে। সাততলা পর্যন্ত তারা উঠে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।’
ড. হাছান বলেন, ‘বিটিভি হচ্ছে টেলিভিশনের আঁতুর ঘর। আজকে যারা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চালায় তাদের অনেকের হাতেখড়ি হয়েছে বিটিভিতে। এই অঞ্চলের এবং বাংলা ভাষার প্রথম টিভি চ্যানেল বিটিভি। ১৯৬৪ সালে এটি স্থাপিত হয়েছিল। ভারতে তখনও টেলিভিশন চ্যানেল হয়নি। সেখানে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং সারি সারি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
সেতু ভবনেও একই অবস্থা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেলের পাশের গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো রাষ্ট্রের ওপর হামলা। এগুলো জনগণের সম্পত্তি। তাদের হামলা তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবকেও হার মানিয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল জ্বালিয়ে দেয়নি, কিন্তু এরা জ্বালিয়ে দিয়েছে। হানাদার বাহিনী যেভাবে মানুষের ঘর-বাড়ি পুড়িয়েছে এরাও একই কায়দায় মানুষের সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের সম্পত্তি পুড়িয়েছে।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে আমাদের মিশনের সামনে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে পাকিস্তানিরা যোগ দিয়েছিল। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেটি আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। একইভাবে আমাদের বিভিন্ন মিশনের সামনে যে বিক্ষোভ হয়েছে, সেখানে বিএনপি-জামায়াত চক্র পাকিস্তান কমিউনিটির সহায়তা নিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। সেই সহায়তা নিয়ে এসব জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং গুজব ছড়াচ্ছে। আজকে কূটনীতিকরা যাওয়ার পর অনেকেই বলেছে ‘দিস ইজ শেইম, শেইম’। অনেকেই আমার কাছে তাদের অনুভূতি শেয়ার করেছেন, সবাই বলেছেন, ‘ইটস ইয়োর ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার, উই আর উইথ ইউ’।”
মন্ত্রীর বক্তব্যে কূটনৈতিক অঙ্গনে এ সময়কালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাও উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশি মিশনগুলোর কাছে নোট পাঠিয়েছিলাম, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এটি নিয়ে যেন বিদেশি দূতাবাসগুলো বা কূটনীতিকরা গণমাধ্যমে কোনো বিবৃতি না পাঠায়। তারা সেটি মেনে চলেছে। আজকে তারা গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি। সেজন্য গণমাধ্যমকে সেখানে ডাকিনি।’
এ সময় গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ দিয়ে ড. হাছান বলেন, ‘অতীতে এ ধরনের কিছু ঘটলেই আমাদের কুটনীতিকদের উদ্বুদ্ধ করা হতো কথা বলার জন্য। এবার আপনারা (গণমাধ্যম) সেটি করেননি, সেজন্য আপনাদেরও ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাত আর বাংলাদেশি শ্রমশক্তি না নেওয়ার কথাটি সম্পূর্ণ গুজব। আজকেও ইউএইর রাষ্ট্রদূত এটি নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নিকটবর্তী থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, প্যালেস্টাইনসহ রাশিয়া, চীন, জাপান, তুর্কী, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, ব্রুনাই, মিসর, আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা, ইউএনডিএসএস, আইইউটি, আইএফডিসির প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের ৪৯ জন কূটনীতিক ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শনে অংশ নেন।