হামলাকারীদের আক্রোশই ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগের প্রতি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে আন্দোলন করা ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ বিএনপি-জামায়াতের হাতে। আমরা আশা করেছিলাম, ছাত্ররা সরকারের উদ্যোগ ও উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা সেটি করেননি। তাদের কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গিদের হাতে, যারা কি না দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। হামলাকারীদের আক্রোশই ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগের প্রতি।
আজ শনিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতকারীদের নাশকতা ও সহিংসতার শিকার নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এরপর তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ভবন ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় পরিদর্শন শেষে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘এদের (হামলাকারী) আক্রোশই ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগের প্রতি। দুজন সাংবাদিককে হত্যা ও একজন নারী সাংবাদিককে নাজেহাল করেছে তারা। এরা (বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গিরা) মানুষের শত্রু, জনগণের ও দেশের শত্রু।’
নারায়ণগঞ্জের নজিরবিহীন তাণ্ডবের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে একটি ভবনে আগুন দিয়ে তিন শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তারা। শিমরাইলে মা হাসপাতালেও আগুন দেয়। সেখান থেকে নবজাতক ও গর্ভবতী মায়েদের অনেক কষ্টে উদ্ধার করা হয়েছে। এমনকি, বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। পিবিআই অফিস, পাসপোর্ট অফিস, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, দুই নম্বর রেলগেইটে পুলিশ বক্স, সিটি করপোরেশন ভবন, যুব উন্নয়ন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। মদনপুরে ছয় পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, থানায় হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে।’
রাজধানী ঢাকায় সংগঠিত নাশকতার বর্ণনা দিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ওরা পদ্মা সেতুর গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, প্ল্যানও সেতু ভবনে হামলা করে পুড়িয়ে দিয়েছে। ত্রাণ ভবন বিনষ্ট করেছে তারা। যে বিটিভি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর্কাইভে রক্ষা করে, সেই বিটিভি ভবনও পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের স্বপ্নের ও গর্বের মেট্রোরেলও ওদের অগ্নিসংযোগে এখন বন্ধ।
সহিংসতায় প্রাণহানির কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। তিনজন পুলিশ ও একজন আনসার সদস্য শাহাদাৎবরণ করেছেন। এক পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছিল ওরা। গাজীপুরের সাবেক মেয়রের পিএসকেও ওরা হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছিলো। এমনকি, নরসিংদী জেলখানায় ওরা হামলা করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বের করে এনেছে, অস্ত্রও লুট করেছে। সেই অস্ত্র ওরা এখন পুলিশের বিপক্ষে ব্যবহার করতে চায়, জঙ্গিদের দ্বারা আবারও দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।
শিক্ষার্থীদের দাবি প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন যে আট দফা দাবি দিয়েছিলেন সে প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এগুলোর মধ্যে যৌক্তিক দাবিগুলো ক্রমান্বয়ে মেনে নেবেন। কিন্তু সেই সুযোগ শিক্ষার্থীরা দেননি।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারী তিনজনকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তারা নিজেদের ওপরে হামলার শঙ্কা পরিবারকে জানিয়েছিলেন। কারা তাদের আক্রমণ করতে চায় সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিন মন্ত্রী দুষ্কৃতকারীদের হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসপ্রাপ্ত পিবিআই কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সিটি করপোরেশন ভবন, শিল্প পুলিশ কার্যালয়সহ আরো বেশকিছু স্থাপনা পরিদর্শন করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, র্যাব-১১-এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল হাই প্রমুখ।