খুলনায় তিন এমপি ও মেয়রের বাসভবনে হামলা
খুলনা নগরীর শেরে বাংলা সড়কের ‘শেখ বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ও শেখ তন্ময়ের বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার (৪ আগস্ট) আন্দোলনকারীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল থেকে এ হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও জেলা পরিষদ অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ ২৫ আন্দোলনকারী আহত হয়। এ ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল সুজনসহ শকাধিক আহত। আহত ২৫ আন্দোলনকারীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থী এবং তাদের সমর্থনে বিভিন্ন পেশার মানুষ শিববাড়ী মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এখন থেকে একটি গ্রুপ বেলা ১১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে যায় এবং প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় আওয়ামী লীগ অফিসে থাকা নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে হটিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ অফিস থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর শর্টগান দিয়ে গুলি করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তিনজন আন্দোলনকারীকে বেদম মারধর করে এবং একজনকে ধরে নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে আটকে রাখে।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, এরপর গুলি করার প্রতিবাদে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা শক্তি বৃদ্ধি করে অওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালায়। হামলায় শাহজালাল সুজন ও বাবুল রানা নামে দুজন আহত হয়। এ সময় এক নারী নেত্রী পিস্তল বের করে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করেন। আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে থাকা মোটরসাইকেল ও যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হাওলাদার, খুলনা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কনিকাসহ আরও কয়েকজন আহত হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেলের সংগঠন নৌপরিবহণ মালিক সমিতির ভবন ভাঙচুর করা হয়। নগরভবনেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
এ ছাড়া হামলার ছবি ও সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাংবাদিকের ক্যামেরা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। জেলা পরিষদের সামনে যমুনা টিভির প্রতিবেদকের মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়াও এনটিভিসহ একাধিক সাংবাদিককে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, খুলনার শেরে বাংলা রোডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, শেখ সালাউদ্দিন এমপি এবং শেখ তন্ময় এমপি ও ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড পরিচালক শেখ সোহেলের বাড়িতে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা।
এ সময় সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা কোনো বাধা দেয়নি। একপর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা ভবনের বিভিন্ন জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর বিকেল পৌনে ৩টার দিকে যুবলীগের কিছুই নেতাকর্মীকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাড়ির সামনে আসে।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সংসদ সদস্যের বাড়িতে আরেক দফা হামলা চালানো হয়, যা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এই সময় শেখ বাড়ির একটি ঘরে বিপুল নগদ টাকা পাওয়া গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রতিটি কক্ষে তল্লাশি করে আন্দোলনকারীরা।
দুপুর দেড়টার দিকে খুলনা প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করতে না পেরে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় প্রেসক্লাব ভাঙচুর করে ক্লাবের ভেতরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
অপরদিকে, বিকেল ৪টার দিকে শহরের গগণবাবু রোডে খুলনার সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের বাড়িতে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। এ সময় মেয়র বাসায় ছিলেন। এ সময় মেয়রের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল, গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ হামলায় ২৫ জন বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়।
এদিকে, রোববার রাত ৮টার দিকে খালিশপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষায়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুলের বাসভবন হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বাসার আসবাপত্র লুটপাট করা হয়। একই সময়ে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।
গতকাল রোববার দিনভর বিভিন্ন অফিস, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও এমপিদের বাস ভবনে আগুন ধরালেও দমকল বাহিনীর কোনো সদস্যকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।