রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান টিআইবির
সারা দেশে জেলায় জেলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপসনালয়, মন্দির ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং নির্বিচারে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সম্পদে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বিবৃতিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব প্রাণহানি, ত্যাগ ও তিতীক্ষার বিনিময়ে বৈষম্যহীন, ন্যায়বিচার ও সুশাসিত রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে শুভক্ষণ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে, এ জাতীয় স্বার্থান্ধ ও সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডই তা নস্যাৎ, ভূলুণ্ঠিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট বলে মনে হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অনতিবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও জোর দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাম্য, সম্প্রীতি ও সবার সমান অধিকারের দাবিতে পরিচালিত আন্দোলনে শত শত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত এ অভূতপূর্ব বিজয়। বিজয়ের এ মাহেন্দ্রক্ষণে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট ও লুটপাট থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাতে হচ্ছে, যা খুবই বেদনা ও হতাশার। চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন জাতি-ধর্ম-শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সাধারণ জনগণের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলেই সফল হয়েছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘এ আন্দোলনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন, শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন। তাদের পরিবারকে আমরা কী জবাব দেব? সংখ্যালঘুদের ওপর এরূপ আক্রমণ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কার স্বার্থরক্ষায়, কোন বিবেচনায় এ জাতীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে? ছাত্র-জনতার ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে অর্জিত রাষ্ট্র বিনির্মাণের এই অভাবনীয় সুযোগ যেন কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক শক্তি ও সংকীর্ণ স্বার্থের চোরাবালিতে আটকে না যায়, সে ব্যাপারে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহ্বান জানাই।’
সংসদ ভবন, আদালত প্রাঙ্গণ ও প্রধান বিচারপতির বাসভবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, থানা, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যেকোনো রাষ্ট্রীয় সম্পদ এদেশের জনগণের, সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদের করের টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। আজ যারা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করছে, তাদের ভাবতে হবে, যে সরকারই আসুক না কেন, দেশ পরিচালনা করতে হলে এসব স্থাপনাগুলো অবশ্যই পুনর্নির্মাণ করতে হবে। আর তাই যেকোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে অংগ্নিসংযোগ করার অর্থই হবে, আমরা আমাদেরই সম্পত্তি ধ্বংস করছি। এ জাতীয় আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে যারা দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন, তাদের পাশাপাশি জনগণকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণে সেনাপ্রধানসহ দায়িত্বশীলরা শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমরা তার কার্যকর প্রতিফলন দেখতে চাই।’
যেকোনো মূল্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তাদের মন্দির, উপসনালয় ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
‘ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পতিত হওয়ার ঘটনা যেন না ঘটে’ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শ্বাসরুদ্ধকর বাকস্বাধীনতাহীন, অসিহষ্ণু, বৈষম্যপূর্ণ ও অগণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রকাঠামো থেকে আমরা কোনোভাবেই যাতে একটি বিশৃঙ্খল ও অরাজক পরিস্থিতির মুখোমুখি না হই, সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’
একইসঙ্গে পুরো দেশবাসীকে ব্যক্তি ও সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব পরিহার করে ন্যায় ও সাম্যের ভিত্তিতে ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সবার জন্য একটি সুশাসিত ও সমঅধিকারভিত্তিক প্রিয় স্বদেশ বির্নিমাণে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান।